কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুর্নীতির অভিযোগ

কক্সবাজার পৌর মেয়রের শ্যালকের ৪ কোটি টাকা জব্দ

কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে শহরতলির ঝিলংজা ইউনিয়নের উত্তর মুহুরীপাড়ার মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির ৪ কোটি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তিনি কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্ত্রীর বড় (শ্যালক) এবং ঝিলংজা ইউনিয়নের উত্তর মুহুরীপাড়ার মৃত আবদুল গণির ছেলে।

ইতোপূর্বে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, তার বড় ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও পৌরসভার কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫০৫ টাকা জব্দ করেছে দুদক। তারও আগে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলের একদফায় ১ কোটি ৬৭ লাখ ১১ হাজার টাকা মূল্যের ১.০১১১ একর জমি, আরেকদফায় ২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও কক্সবাজার শহরে ৪টি ফ্ল্যাটও জব্দ করে দুদক।

দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশ্বস্ত একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল বুধবার সকালে ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমানের নামে এফডিআর করা ওই টাকা জব্দ করা হয়েছে।

দুদকের ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত চলাকালে সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলসহ কক্সবাজার জেলার ১০ জন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধান করছে দুদক। এই ১০ জনের মধ্যে কক্সবাজারে কর্মরত দুইজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এই অনুসন্ধানকালে ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত ঘটনায় পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, তার বড় ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও পৌর কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর নামও উঠে আসে। অধিকতর তদন্তে উঠে আসে মেয়র মুজিবুর রহমানের দুই শ্যালকের নামও।

সূত্র মতে, দুদকের অনুসন্ধানে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলের নামে চলমান বেসিক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় ইতোপূর্বে ২০ কোটির বেশি টাকার সন্ধান পায় দুদক। ওই টাকা জব্দের পর কক্সবাজার জেলা ডাকঘরে আরও ৮০ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে সংস্থাটি। সর্বশেষ ইউনিয়ন ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় আরও ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়।

সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংকে সঞ্চিত ওই ৪২ লাখ টাকা জব্দ করতে অভিযান চালায় দুদক।

ওই সূত্র জানায়, মেয়র মুজিবুর রহমান, তার ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে গত সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের থানা রাস্তার মাথায় স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় অভিযান চালায় দুদক। ওই ব্যাংকে তিনজনের হিসাবে ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫০৫ টাকা পাওয়া যায়।

দুদক জানায়, মেয়র মুজিবুর রহমানের শ্যালক মিজানুর রহমানের ব্যাংক হিসাব তল্লাশিকালে ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ৪ কোটি টাকার সন্ধান পায় দুদক। বুধবার সকালে ওই ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমানের এফডিআর একাউন্টে গচ্ছিত ৪ কোটি জব্দ করে দুদক।

অভিযোগ মতে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কথিত মধ্যস্থতার (দালালি) নামে অবৈধ উপায়ে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে দুদক। তাই পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, ছেলে হাসান মেহেদী রহমান, মেয়রের শ্যালক মিজানুর রহমান, কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এছাড়াও একই অভিযোগে সাবেক কাউন্সিলর নোবেলের নামে চলমান ব্যাংক হিসাবে পাওয়া ২০ কোটি, ডাকঘরে পাওয়া ৮০ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৪২ লাখ টাকা এবং কক্সবাজার শহরের অভিজাত বেষ্ট ওয়েস্টিন হোটেলে দুইটি ফ্ল্যাট, ওয়ার্ল্ড বীচ হোটেলে একটি ও আরেকটি আবাসিক বিল্ডিংয়ে একটি ফ্ল্যাট জব্দ দেখানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেল, রামু চাকমারকুল এলাকার এন আলম ফিলিং স্টেশনের মালিক এইচএন আলম ও দুই সাংবাদিকসহ জেলার ১১ জনের হিসাব অনুসন্ধান করছে দুদক। একজন সাংবাদিকের আয়কর হিসেবও তলব করা হয়েছে। এই অনুসন্ধানে একে একে অনেকের নাম উঠে আসছে। প্রতিদিনের সংবাদ

পাঠকের মতামত: