কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

উপকূলে বাড়ছে শিশুশ্রম

যে বয়সে ছেলে-মেয়েরা বই খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, যে বয়সে শিশুরা অবসর সময়ে
মাঠ মাতিয়ে খেলাধুলা করার কথা সে বয়সে শিশুরা বিভিন্ন শ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এসব
শিশুরা এক সময় লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতি রোগ করোনা ভাইরাস থেকে শিশুদের রক্ষায় সরকার বাধ্য হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখেছে। বড়রা যে কোন ভাবে পড়ালেখা ম্যানেজ করতে পারলেও শিশুরা তা পারছে না। দীর্ঘ ছুটি পেয়ে অনেকেই শুটকি পল্লী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রমজীবি কাজে জড়িয়ে পড়েছে। কাজ করে হাতে কড়ি পেয়ে শিশুরা খুশি। যেসব শিশুরা কাজের বিনিময়ে টাকা আয় করছে এসব শিশু ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরবে কিনা এনিয়ে অনেকেই দিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। অভিভাবকরা যদিওবা বলছে তাদের ছেলে মেয়েরা স্কুল খুললে নিয়মিত
পড়ালেখা করবে। শিক্ষকদের অভিমত যে যাই বলুক বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝড়ে পড়া শিশুর সংখ্যা বাড়তে পারে আশংকাজনক।

উখিয়ার উপকূলীয় জনপদ সোনারপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, মাদারবনিয়া, চোয়াংখালী,
মনখালী, শাপলাপুর, বাহারছড়া সহ বেশ কিছু সমুদ্র উপকূলীয় গ্রাম ঘুরে স্থানীয় জেলেদের সাথে
কথা বলে জানা যায়, আশির দশকে উপকূলের সাথে উখিয়া উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ছিল বিধায় এখানকার পরিবারগুলো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবাসহ সম্পূর্ণ নাগরিক
সেবা বঞ্চিত ছিল। এলজিইডি সড়ক নিমার্ণের পাশাপাশি কক্সবাজারের দৃশ্যমান সড়ক মেরিন
ড্রাইভের নিমার্ণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এখানে স্কুল কলেজ সহ নানা রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে
উঠেছে।
তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় উপকূলে মাদারবনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি গড়ে
উঠার ফলে এলাকার উপজাতি থেকে শুরু করে জেলে পরিবারে শিক্ষার ছেঁায়া লেগেছে। মাদারবনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার মোক্তার আহমদ জানান, করোনা ভাইরাসের দীর্ঘ ছুটির কারণে তার স্কুলে প্রভাব পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন শ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া শিশুর সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে
বাড়তে পারে। কেননা এসব শিশুরা রোজি রোজগারে হাতে কড়ি পেয়ে পড়ালেখার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। এসব শিশুদের আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকদের ও অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
জালিয়াপালং বাদামতলী ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগর, মনির, জাবেদ ও সেলিম নামের ৪ জন
শিশু মাছ ধরছে। তাদের বয়স ১১ থেকে ১৩ বছর। জানতে চাইলে তারা লেখাপড়া করে কিনা, জবাবে
বললেন তারা সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। স্কুল বন্ধ থাকায় খালে মাছ ধরে দৈনিক ২০০/৩০০ টাকা করে আয় করছে।
তারা বলেন, সমুদ্র থেকে মাছ ধরার নৌকা ভিড়লে তারা সেখান থেকে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করেন। শিক্ষা প্রতিষ্টান খুললে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বললেন, আর কি স্কুলে
যাব, এখানে ভবিষ্যতে দৈনিক ৪/৫শত টাকা রোজগার করা যাবে।
চোয়াংখালী শুটকি পল্লীতে কাজ করছে নছিমা, আয়েশা, রহিম, শহিদসহ প্রায় ৭/৮ জন ছেলে
মেয়ে। এরা সবাই চোয়াংকালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষাথর্ী। স্কুল বন্ধ
থাকায় তারা এখানে কাজ করে দৈনিক দুইশত টাকা করে রোজগার করার কথা জানালেন। স্কুল খুললে আবার পড়ালেখা শুরু করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিলেন।
উখিয়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পাতাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক এসএম কামাল উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারির কারণে অনেক পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অর্থ সংকটে ভুগছেন তারা। যার ফলে বাড়তি আয়ের জন্য সন্তানদের কাজে লাগিয়েছেন তারা। এভাবে শিক্ষা থেকে শিক্ষাথর্ীরা ঝড়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। উখিয়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বছরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সারাদেশে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়ে গেছে।
শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে নিরসনে তৎপর উপজেলা প্রশাসন। অচিরেই শুঁটকিপল্লিসহ শিশুশ্রমে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হবে। যারা শিশুদের চাকুরীর নামে খাটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শিক্ষাথর্ীদের পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্বেগ নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: