কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

করোনামুক্তির প্রত্যাশায় বছরের শেষ সূর্যকে বিদায়

সৈকতের আকাশে হালকা মেঘ আর বাতাসে কিছুটা শীতের আমেজ। সেই সঙ্গে করোনা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান। তার মাঝেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ভিড়। বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ মানুষের ঢল নেমেছে।

যদিও থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনো আয়োজন নেই। তারপরও ছুটি কাটাতে সৈকত নগরীতে ছুটে এসেছেন হাজার হাজার পর্যটক। ইতোমধ্যে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্টে বুকিং হয়েছে আশানুরূপ। আর থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে নতুন করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে টুরিস্ট পুলিশ। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পর্যটকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

প্রতি বছর ইংরেজি পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে নানাভাবে সব হোটেল-মোটেল সাজানো হয়। কিন্তু এ বছর তা চোখে পড়ছে না। তবে হোটেল-মোটেলে বাড়ছে রুম বুকিং। ২০২০ সালকে একেবারেই ভিন্ন দাবি করে আগামী বছর মহামারি কাটিয়ে একটি সুন্দর বছর পাওয়ার প্রত্যাশা সৈকতে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।

ঢাকা থেকে আসা প্রিয়া জান্নাত বলেন, ২০২০ আমাদের জীবনে স্থবিরতা নিয়ে আসছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবী করোনামুক্ত হোক ২০২১ সালে এটাই প্রত্যাশা।

ঢাঙ্গাইল থেকে আসা সাইফুল হক জুয়েল বলেন, বছরের শেষ সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম। তবে সামনের বছরটা যেন সুস্থ পৃথিবী দেয় সেই প্রত্যাশা করছি।

কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ইতোমধ্যে হোটেলের সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কিছুই করছে না বেশির ভাগ হোটেল-মোটেল। করোনা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রশাসনের কঠোর বার্তা রয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বর্ষবরণ হবে অন্য রকম। একদিকে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি, অন্যদিকে নিরাপত্তা। তারপরও লাখো পর্যটক কক্সবাজারে আসছেন। আমরা সকল নির্দেশনা পর্যটকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সৈয়দ মুরাদুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের সচেতন করতে প্রতি নিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া সৈকতে প্রবেশ করলে জরিমানাও করা হচ্ছে। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, সৈকতের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত আমাদের বাহিনী থাকবে। মোবাইল টিম ও রেসকিউ টিমও নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে। সবগুলো পয়েন্টে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সৈকতে পর্যটকদের জমায়েতকে করোনা সংক্রমণের বড় বিপদ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট্যরা। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া বলেন, বর্ষবরণকে ঘিরে যে জমায়েত হচ্ছে, সবাই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে সমুদ্রে নামছেন, চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, দেশের কোথাও সরকারিভাবে এখন লকডাউন নেই। তাই আইনগত কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারলেও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জনসচেতনাতামূলক কার্যক্রম বাড়িয়েছি।

সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭০ হাজার ৯০৩ জনের। সেখানে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৯১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৩২০ জন। মারা গেছেন ৮৩ জন।

পাঠকের মতামত: