কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রের কারখানা, বাড়ছে খুন

সাইফুদ্দীন আল মোবারক, টেকনাফ::

উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা আশ্রিত এলাকা হওয়ায় এখন রোহিঙ্গাদের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে।মানবিক কাতিরে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারাই এখন
টেকনাফে রামরাজত্ব করছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।দেশের আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়াভাবে চলছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।যেকোনো ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতে তারা বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করছে না,এমন
অভিযোগেরও শেষ নেই।

যতসব অপরাধমূলক কাজ আছে,সবকিছুই এসব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারাই জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।রোহিঙ্গারা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সচল রাখার হাতিয়ার
হিসেবে বিভিন্ন ধরণের দা,কিরিচ,দেশীয় অগ্নেয়াস্ত্র,পিস্তলসহ সবকিছুই এসব রোহিঙ্গাদের হাতে সংরক্ষিত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন অস্ত্রের কারখানা হিসেবে গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।

এমনকি অস্ত্রেরবাজার নিয়ন্ত্রণেও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।অস্ত্রবাজারে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের হাত না থাকলে এতো অস্ত্র কিভাবে আসে তাদের হাতে,এমনও প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজ ও সচেতন
মহলের।অনেক সময় দেখা যায়,রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সাথে কারো কথায় বা কোনো কাজে মনোমালিন্য হলেই নিমিশের মধ্যেই অস্ত্র নিয়ে বের হয়ে শুরু করে দেয় হত্যাকান্ড।এভাবেই তারা অনেক মানুষকে হত্যা করেছে,যা ইতোপূর্বে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে। একধারাবাহিকভাবে একের পর খুন করে আসছে এসব অস্ত্রধারী রোহিঙ্গারা।

গতকাল ২৬ই জানুয়ারী উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে সন্ত্রাসী দুই গ্রুপের মধ্যে গুলাগুলিতে মোহাম্মদ জাবেদ (২০) নামক এক রোহিঙ্গা শরনার্থীনি হত হয়েছে। নিহত মোহাম্মদ জাবেদ উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের ডি/৪ ব-কের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসলামের পুত্র বলে জানা যায়। সোমবার রাত একটার দিকে পালংখালী ইউনিয়নের তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ডি/৮ ব-কে এই ঘটনা ঘটে।

সূত্রমতে, সোমবার গভীর রাতে উল্লেখিত রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের ডি/৮ ব-কে মোজাম্মেল ওরফে শেখ ও মৌলভি ইউনুসের নেতৃত্বে ১০/১২ জন অস্ত্রধারী রাস্তায় সন্দেহজনকভাবে চলাচল করছিল।তখন স্থানীয় পালংখালীর ঘোনারপাড়ার নুরুল হাকিম ওরফে মনুইয়ার নেতৃত্বে ৭/৮ জন লোক তাদের বাঁধা দেয়। মনুইয়ার লোকজন রাতের
বেলায় শেখের পক্ষের লোকজনকে অযথা ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ৪/৫ রাউন্ড গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জাবেদ গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র
নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জাবেদের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন।

১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসপি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা তাদের ক্যাম্পের ভিতরেই অস্ত্রের কারখানা গড়ে তুলেছে বলে জানা যায়।বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানেও ধরা পড়েছে অস্ত্র বানানোর সরঞ্জামসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী কারীগর।
বিশেষ করে র‍্যাবের অনুসন্ধানিক অভিযানে উখিয়ার পালংখালী মধুরছড়ার গহীন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়ে রাতব্যাপী অভিযান চালিয়ে অস্ত্র তৈরির দুই কারিগরসহ তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র,দুই রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ
অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছিল।আটককৃতরা হলো আবু মজিদ ওরফে কানা মজিদ ও রবি আলম।তারা দুজনই অস্ত্র তৈরির কারিগর। একটি কুড়ে ঘর থেকে তাদের তৈরি তিনটি বন্দুক, দুটি গুলি ও বেশ কিছু অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা মহেশখালী থেকে এসে মধুরছড়া গহীন পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান করে
অস্ত্র তৈরি করে রোহিঙ্গাদের কাছে নিয়মিত সরবরাহ করত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে এ অস্ত্র তৈরির কাজ চালিয়ে আসছে বলে জানিয়েছিলেন র‍্যাব-১৫’র উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান।
এর পরেও থেমে থাকেনি রোহিঙ্গাদের অস্ত্রবাজি।প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্ররের ঝনঝনানি শুনা যায়।

গত ১৬ই অক্টোবর(জুমাবার) ৪০০পিস ইয়াবা ও তিনটি দেশিয় তৈরি রামদা/কিরিচসহ ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-১৬
(এপিবিএন)।তারা হলেন- বালুখালী ৯ নং ক্যাম্পের বক-বি/৯ এর হামিদ হোসেনের ছেলে মুন্না প্রুপের সদস্য ছৈয়দুল আমিন (২৫), শালবাগান ক্যাম্প বক-এফ/৫ এর আব্দুস সালামের ছেলে কবির মাঝি (৫২) এবং নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প
বক-ই, শেড-৯৭৪ এর সামচুল আলমের ছেলে নুর নবী (২৯), যার এমআরসি-০০৩১০ছিল।

পুলিশ পরিদর্শক নিরস্ত্র রকিবুল ইসলাম এর নেতৃত্বে এসআই মাহবুব হোসেন শক্তিশালী ফোর্সসহ অভিযান পরিচালনা করে এদের গ্রেফতার করেছিল।
১৬ এপিবিএন অধিনায়ক মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে কিছু সন্ত্রাসী। সেখানে উগ্রপন্থী লোকজনও জড়িত বলে তঁারা বিভিন্ন সুত্রে জানতে পেরেছে।এরপর থেকে ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক নজরদারি বাড়ানো হয়।
ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছে।

আটক সন্ত্রাসী নুরুন্নবী আবার ডাকাত সালমানশাহ গ্রুপের সদস্য বলেও এবং তার বিরুদ্ধে
একাধিক মামলা রয়েছেবলেও জজানান তিনি।
এদিকে ৩০ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে
রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক শীর্ষ ডাকাত সালমান শাহকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ আটক করেছে এপিবিএন পুলিশ।
নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ লেদা বক্কর মেম্বারের বাড়ীর নিকট ডাকাত সালমান শাহ’র বসতঘরে অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ লেদা সোনা
মিয়ার পুত্র শীর্ষ ডাকাত সালমান শাহ ওরফে শহিদুল ইসলাম (১৮) কে আটক করে।

এসময় তার বাড়ীতে তল্লাশী চালিয়ে দেশীয় তৈরী ২টি অস্ত্র ও ৪হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছিল।ডাকাত সালমান শাহ আটক হওয়ার খবরে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্থি দেখা দিয়েছে।১৬ এপিবিএন পুলিশের কমান্ডিং অফিসার
হেমায়াতুল ইসলাম সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছিলেন।
একি কায়দায় টেকনাফের উনচিপাং পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ চার রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা। ক্যাম্পের রইক্ষ্যং উত্তরপাড়া জসিমের বাড়ির সামনে উনচিপাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হামিদুল্লাহ, উখিয়া জামতলী ক্যাম্পের ফুরকান,
মো. আইয়াছ ও নুর আলম কে আটক করেছে ।ওই আটক রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, একটি কার্তুজ ও একটি রামদাসহ পাওয়া গেছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ১৬ এপিবিএন এসপি মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম ।

গেল ২০ই জানুয়ারি (বুধবার) ভোররাতে টেকনাফের চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প নং-২১এর আই ব-কের আমান উল্লাহর বসতঘর এ অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্রসহ পাঁচ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা। আটকরা হলেন- চাকমারকুল ২১নং ক্যাম্পের ব-ক ডি ১/৬ এর আবু তাহেরের ছেলে মো. ইসমাইল (২২), ব-ক এ/৫ এর মৃত বদির আহম্মদের ছেলে মো. খায়রুল ইসমাইল (৩৩) মাঝি, ব-ক ডি/২ বাসা ১১৫ এর সাব্বির আহম্মদের ছেলে মো. ছালাম (২২), ব-ক এ/৭ এর সৈয়দ হোসেনের ছেলে মো. হারুন (৩১) ও ব-ক ডি/৬ এর মৃত দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে মো. জামাল আহাম্মদ।এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল,
দুই রাউন্ড গুলি ও ১৯টি রামদা জব্দ করা করেছে।১৬ এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক
এসপি মো. তারিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন,রাত ১টার দিকে ক্যাম্প নং ২১, ঘর নং ৩২০ ব-ক আইয়ে ৮/১০ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সশস্ত্র অবস্থায় ক্যাম্পে হামলার উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে,এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান
চালিয়ে তাদের আটক করেছে ।এসময় আরো কিছু সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।

গত ১০ তারিখও হোয়াইক্যং চাকমারকুল তোহা গ্রুপের সাথে বৃষ্টির ন্যায় গুলি
চলাচল হয়েছে।এসময় এক জন নিহত হলেও অন্তত ২০-২৫জন আহত হয়েছে বলে জানা
গেছে।এত গ্রুপ কিভাবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্ট হয় তা এখনো পর্যন্ত সঠিক তথ্য জানা যায়নি। কিভাবে এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি হয় তা গোয়েন্দা বাহিনীর কঠোর নজরদারীতে বের হয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল।ঠিক
একিদিনে উখিয়ার রত্নপালং ইউনিয়নের বশির আহমদের ছেলে ফোরকান প্রকাশ
কালু (১৪) কে রোহিঙ্গা কিশোর আয়াছ উদ্দিন ছুির মেরে হত্যা করেছে।এমনকি
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেউ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের তথ্য সরবরাহ করে,এমন সন্দেহ
হলেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অনেককে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে।টেকনাফের শাল বাগানের আবুল বশরের পুত্র আবদু শুক্কুর(৩০)কে সোর্স সন্দেহ হওয়ায় হত্যা করেছে জকির বাহিনী।যদিও সে সোর্স ছিল বলে এখনো জানা যায়নি।আজও নিহত আব্দু শুক্কুরের স্ত্রী ছেতেরা বেগম তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছে। তার পাশে কেউ এগিয়ে আসেনি।

শুধু এখানে শেষ নয়,এসব সন্ত্রাসী রোহঙ্গাদের হাত থেকে সরকার দলীয় লোক যুবলীগের নেতা ওমর ফারুকও রক্ষা পায়নি।এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার পর থেকে অনেক বাংলাদেশী যুবককে কে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করেছে।এপর্যন্ত এসব হত্যার কোনো ধরণের পতিকার পাননি কেউ।এখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করলে হাজারো অস্ত্র উদ্ধার হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।যতদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিরুরি অভিযান পরিচালনা করে এদের অস্ত্রের কারখানা বা অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়া হবে না,ততদিন উখিয়া টেকনাফ নিরাপদ নয় বলে জানান স্থানীয় শিক্ষিত সমাজ ও সচেতন মহল। এবিষয়ে ১৬ এপিবএন পুলিশের নবাগত এসপি তারিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,যেখানে অস্ত্র আছে বলে খবর পাই, সেখানে অভিযান পরিচালনা করে আসামীদের আটকপূর্বক অস্ত্র উদ্ধার কারার চেষ্টা করি।এভাবে আমরা অইেশ আসামী ও অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষমও হয়েছি এবং
অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: