কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ন্যায্যমূল্য চাই টেকনাফসহ পুরো জেলার লবণ চাষীরা

সাইফুদ্দীন আল মোবারক, টেকনাফ::

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, মহেষখালী ও কুতুবদিয়ার ৭০থেকে ৮০% মানুষের আয়ের উৎস হচ্ছে লবণ চাষ,বিশেষ করে টেকনাফের মানুষেরা একমাত্র লবণ চাষের উপর জীবিকা নিবার্হ করে থাকে।গরীব অসহায় লবণ চাষী মানুষ গুলো লবণের ন্যায্য মূুল্য না পেয়ে এখন হতাশ হয়ে পড়েছে ।অথচ কতিপয় সিন্ডিকেটের কারণে আজ সেই লবণ শিল্প ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে৷

টেকনাফসহ উপকুলীয় বিভিন্ন উপজেলায় লবণের গৌডাউনে লবণ থাকার পরও বিদেশ থেকে লবণ আমদানী ও নানা সিন্ডিকেটের কারণে দিন দিন মূল্য কমে যাচ্ছে লবণের। ধ্বস নেমেছে লবণ বিক্রিতে।এতে করে সংকটে পড়েছে গরীব লবণ চাষীরা।
কক্সবাজারের টেকনাফ সাগর উপকূল। যেখানে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চলছে লবণ চাষ। কেউ মাঠ তৈরীর কাজে ব্যস্ত আবার কেউ সমুদ্রের লবনাক্ত পানি জমিয়ে লাগাচ্ছেন সূর্যের তাপ। যে তাপে পানি শুকিয়ে তৈরী হয় লবণ।উক্তপ্ত সূর্যের গরমে অতিরিক্ত কষ্টে চাষীরা লবণ তৈর করার পরও সঠিক মূল্য পাচ্ছে না এসব লবণ চাষীরা।
তবে নানা প্রক্রিয়া আর ঘামঝড়ানো শ্রমে যে লবণ উৎপাদন হচ্ছে তার দাম নিয়ে এখন চরম হতাশ লবণচাষীরা।এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল টেকনাফ, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্ধ লাখ চাষীসহ ৫ লাখ মানুষ। যারা দেশের মানুষের কাছে লবণ সরবরাহ করে জীবিকা মিটিয়ে থাকে৷

কক্সবাজারের টেকনাফসহ উপকূলীয় উপজেলায় এই শিল্পের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ভাল নেই লবণ শিল্পের সাথে জড়িতরা লোকগুলো । লাগামহীনভাবে লবণের দাম কমে যাওয়ায় খুবই ক্ষতিগ্রস্থ লবণচাষীরা।

চাষিদের প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে খরচ হয় ৭-৮ টাকা। আর তা মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয় ৪ টাকা কেজি করে। আবার একই লবণ সিন্ডিকেটের হাত বদলে, আয়োডিনযুক্ত প্যাকেটজাত হয়ে, ব্রান্ড লাগিয়ে বাজারে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি।এ ক্ষতির জন্য চাষীরা দায়ী করছেন অসাধু মিল মালিক সিন্ডিকেটদের। এসব অসাধু সিন্ডিকেট গুলো দেশে চাহিদা পূর্ণ করার মতো লবণ মজুদ থাকার পরেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করে ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশের লবণ শিল্প । এ অবস্থায় সীমান্ত এলাকার লবণ চাষী ও মালিকদের দাবী লবণের মূল্য আগের মতই রাখা হউক। যাতে করে লবণ শিল্প বেঁচে থাকে আর এই শিল্পের সাথে জড়িতরা কোনো রকম মুক্তি পায়।

গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মণ প্রতি লবণের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তা কমে প্রায় ৪’শ টাকায় চলে আসে । ২০১৮-২০১৯ সালে অর্থবছরে ২০০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০১৯-২০২০ সালে অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় নেমে আসতেই থাকে ।

২০২০-২০২১ সালে অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়ে ১৭০ টাকা থেকে ক্রমান্বয়ে ১৪০ টাকায় নেমে আসাতে চাষীরা একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছে। কিন্তু চাষ করতে মণ প্রতি লবণ উৎপাদনে খরচ প্রায় ৩’শ টাকা পড়ছে বলে জানান লবণ চাষী এবং সংশ্লিষ্ট পর্তর্র্ৃপক্ষ ।এসব কিছু সিন্ডিকেটের কবলে পড়ার কারণে হচেছ বলে মন্তব্য করছেন তাঁরা ।

টেকনাফের লবণ চাষীরা আরো জানান, মণ প্রতি ৫’শ টাকা থাকা লবণ ১৬০ টাকায় নেমে যাওয়ায় আমরা খুবই কষ্টে জবিন-যাপন করছি ।কয়েকজন লবণ চাষী জানান , আমরা ঋণ নিয়ে এ চাষ শুরু করছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে পারিনি। অসাধু মিলের মালিকরা সিন্ডকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ফেলেছে। আর চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও বেশি লাভের আশায় বিদেশ থেকে তারা লবণ আমদানি করছে।

এদিকে লবণ চাষীরা তাদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য পেতে সরকার প্রধান প্রধামন্ত্রী বরাবর ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলা চিঠিও লিখেছেন ।চাষীরা খোলা চিঠিতে যা লিখেছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলো। আমরা কক্সবাজারবাসি সমুদ্র উপকূলীয় জনগণ। আমরা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা তথা ভৌগোলিক নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা। আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রবাহমান নদীর ভয়ংকর উচ্চাশ ও গর্জনে, প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমের ৬টি মাস ভয়-ভীতিতে কাটাই। কখন ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের মতো মহা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আমাদের প্রাণ কেড়ে নিয়ে যায়!! ভীত সন্ত্রস্ত হয়েও উপকূলীয় অঞ্চলের সৃষ্ট আদি পেশা লবণ শিল্পকে আকড়ে ধরে আছি। কেউ জমির মালিক, কেউ লবণ ব্যবসায়ী, কেউ লবণ উৎপাদনকারী এবং কেউ লবণ বহনকারী শ্রমিক।

আমাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অর্থকারী উৎপাদিত ফসল বা শিল্পীজাত দ্রব্য হচ্ছে “লবণ”।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দূর্বিসহ জীবিকায়নে দূর্ভীক্ষের পূর্বাভাসের কথাগুলো যদি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রসারিত হয়, তাহলে প্রিয় বাংলাদেশের মান যতই উন্নয়ন হোক, বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দঁাড়িয়ে থাকার স্থান হারাবে। কক্সবাজারের দূর্ভীক্ষের কথা বিশ্ব জেনে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, “পেটে অন্ন না থাকলে পিটে সয় না”!
এই তত্ত্বের পূণরাবৃত্তিবয়ানের রাস্তা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। যে জমিতে লবণ উৎপাদন করে আমাদের আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত জীবিকা নির্বাহ করেছি ও করি, সেই উৎপাদিত “লবণ” আজ মূল্যহীন।
একজন লবণচাষী লবণ চাষের জন্য শ্রমিক প্রতি ৩ কানি জমি বর্গা নিতে গিয়ে গৃহপালিত গরু ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাস-মুরগিসহ বিক্রি করে টাকার সংকূলান না হলে বিয়ের অলংকার বন্ধক বা বিক্রি করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে জীবিকার সন্ধানে রত। আমাদের বর্তমান অবস্থা অসহায়, নিঃস্ব এবং মানবেতর হয়ে হতদরিদ্রের নীচু সীমানায় চলে যাওয়ার উপক্রম বিদ্যমান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কক্সবাজারের নুন খান, আপনার মমতাময়ী দয়ালু হাতে আরাকানের মজলুম উদ্বাস্তদেরকে দয়ার হাত বাড়িয়ে দিতে দেরী করেননি। মাননীয় শিল্পমন্ত্রী সমীপে কক্সবাজারবাসীকে বাঁচানোর স্বার্থে বিদেশী লবণ আমদানি বন্ধ করে স্ব-দেশীয় উৎপাদিত লবণের উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করার রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আদেশ দানে এবং আশা করি অসহায় লবণ চাষীদের মুখে হাসি ফোটাবেন৷

তারা চিঠিতে আরো তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, যে, মাননীয় গণতন্ত্রের মানসকন্যা, ও মাদক এবং দূর্ণীতি বিরুদ্ধে আপোষহীন সংযমী সংগ্রামী নেত্রী, বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র মর্যাদায় উন্নীতকরণের স্বপ্নদ্রষ্টা, কাল্পনিক বাংলাদেশের বাস্তব রূপদানকারী বিশ্ব মানবতার মমতাময়ী “মা”, সমুদ্র সীমানা ও স্থায়ী সীট মহলের সীমানা রক্ষাকারী সফল প্রধানমন্ত্রী,আপনি নিজেই বলেছিলেন বিগত ৩০সে ডিসেম্বরে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের ভিডিও কনফারেন্সে৷

আপনার মূখের বাণী:
“কক্সবাজারের নুন খাই,,
কক্সবাজারের গুন গাই”।
আপনার সেই বাণী অনুযায়ী আমরা জানাতে চাই,কক্সবাজারের ৭ উপজেলা টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ৫৫ হাজার লবণ চাষীর পাশপাশি এ শিল্পের সাথে প্রায় ৫ লাখ মানুষ‌ জড়িত। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস লবণ চাষ। তাই লবণ চাষী ও মালিকদের ন্যায্যমূল্য প্রদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত সময়ে লবণের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কক্সবাজার জেলাবাসী।

পাঠকের মতামত: