____১____
শিক্ষক জন্মায়, সৃষ্টি হয় না! গাজী স্যারও জন্মেছিলেন ষোলকলায় শিক্ষক হয়ে। ধরায় এসেছিলেন রাত্রিকালীন মেহমানের বেশে। রাত্রিকালীন মেহমান কেউ দেখে, কেউ দেখে না! কেউ পায়, কেউ পায় না। যারাই পেয়েছে তাদের বুকে বুকেই ক্ষতচিহ্ন , উনি যে ধরাধমের বাঁধন ছিন্ন করে চিরঘুমে আজ!
____২____
১৯৮৬ সালে সমাজতত্ত্ব বিভাগটি পুরাতন কলাভবনের চতুর্থ তলায় একেবারে পশ্চিমে সিঁড়ির পাশেই ছিল।
গাবাডিং প্যান্ট, গাবাডিং প্যান্টের মেলানো শার্ট, মোটা বেল্ট, মোটাতাজা শরীরের সাথে কাপড়সহ মেছ করা মোটা জুতা ।
হাঁটাচলা ঝমকিতে বেশ নান্দনিক, কেউ কথা না বললেও নজর কাড়ে । নির্ভীক স্পীডি হাঁটায়, দর্শকের বুক নাড়ায়। চালচলনে এমন একজন শিক্ষককে দেখে নাম জানতে মন চাইল এই স্যারের নাম কি?
…. গাজী সালেহ উদ্দিন! গাজী স্যার নামেই চেনে সবাই।
____৩____
১৯৯৩ সালে চ,বি ফেরত হয়ে এম, ফিলের আবেদন করি আরো অনেক পরে। গাজী স্যার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান।
সুপারভাইজারের কোটা পাঁচজন এর বেশী হওয়ায় চূড়ান্ত ভর্তিতে বাদ পড়ি।
গাজী স্যার আমাকে খোঁজে বের করে পাহাড়তলীর বাসায় নিয়ে ডঃহেলাল মহিউদ্দিন স্যারকে ফোন করে আমাকে ভর্তি করিয়ে নেন। তখনও স্যারের সাথে আমার কোন পরিচয় ছিল না।
ভর্তির পর থেকে আমি উনাকে স্যার নয় দেবদূতসম শ্রদ্ধায় লালন করতে রই,
এরপর থেকে সখ্যতা। ইনানী মোহাম্মদ শফির বিলে স্যারের একটা প্লট আছে। কক্সবাজার আসলেই ডাক পড়ে আমার । একান্ত আর্শীবাদের হয়ে রই।
____৪____
কক্সবাজার সিটি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সমাজবিজ্ঞানের অনার্স খোলার আবেদনে ইনেন্সপেকশনের দায়িত্ব পান গাজী স্যার।
স্যার কাগজপত্র দেখছেন সবতো আর নেই!
সেমিনারে আমরা সব বই রেখেছি প্রফেসর নাজমুল করিমের সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ বইটি ভুলে রাখা হয়নি। উনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন কৃতজ্ঞতা বড় জিনিস নাজমুল করিম না হলে সমাজবিজ্ঞান এতদূর আসতো!
এবার স্যার কইয়া ফেলে , আবছার সিকদারকে শিক্ষক হিসেবে নিতে হবে
( আবছার সিকদার সায়মা ওশান সিটি স্বত্বাধিকারী আলীর জাহাল সে সময়ে স্যারের এম,ফিল,ছাত্র। )
আবছার সিকদার স্যারের এই শর্তে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়, আজো কক্সবাজার সিটি কলেজে পড়ায়।
____৫____
উখিয়া কলেজে অনার্স খোলার দিনেও ইনেন্সপেকসনের দায়িত্ব পান গাজী স্যার।
চোখ বন্ধ করে রিপোর্ট লিখে কইয়া যায় সবপূরণ করে আমারে জানাবা.. দেখলেতো আর অনার্স পাবা না। উনার এই রিপোর্টে উখিয়া কলেজেও সমাজবিজ্ঞান অনুমোদন পায় … ইনিই আমাদের গাজী স্যার!
____৬____
জীবনের এতটুকুন পথ মাড়িয়ে যখন বড্ড একা হই ভাবি জীবনে শ্রেষ্ঠ অর্জন কি! কোথায় যোগের চিহ্ন! কোথায় বিয়োগের!
সব হিসেব চুকিয়ে যেটি পূঁজি হয়ে গর্বের ধন বনে আছে আজও—-
“চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে অসাধারণ উদার কিছু শিক্ষকের ছাত্রছিলাম আমরা’,
(অনুপম সেন স্যার, মোশাররফ হোসেন, বদরুল আলম, এ, এফ এম ইমাম আলি, হাসানুজ্জামান, আবুল হোসেন ভূইয়া,আবদুল কুদ্দুস , ফারজানা ইসলাম, গাজী সালেহউদ্দিন স্যার উবাইদুল করিম দুলাল স্যার )
..সাথে অনন্য কিছু বন্ধুবান্ধব Random Sampling এ ভাগ্যে পড়েছিল আমাদের
যারা বিদায়ের প্রায় ত্রিশ বছর পরও একচিলতে কানাকড়িবিনে অদেখা ভালবাসায় প্রত্যেকেই প্রত্যেককে মমি করে রেখেছে মমতায়।
যাদের কারণে আলী শাহ, রিন্টু,জসিম, সবুজ, ইমুরা মরেও অমর।
গাজী স্যার আমাদের সেই গ্লোবাল গাঁ’য়ে কলাগাছের ভেলায় হৃদয় হতে হৃদয় বন্দরে জীবন তরী নোঙর করা মানুষ! ভালবাসার ষ্টাচু অব লিবার্টি —
লেখক:
আলমগীর মাহমুদ
বিভাগীয় প্রধান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ৷
ই-মেইল: alamgir83cox@gmail.com
মোবাইল নং: ০১৭৪০-৫৪৫০৩৫
উখিয়া-কক্সবাজার।
পাঠকের মতামত: