কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সমুদ্রের ওপর রানওয়ে, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

 

দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ওপর নির্মিত হচ্ছে রানওয়ে, যা হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার বিমানবন্দরে। সমুদ্রবক্ষের ওপর নির্মিতব্য এক হাজার ৭০০ ফুটের রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
সমুদ্রের ওপর রানওয়ে, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

রানওয়ের অন্তত এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের পানির ওপর। এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। দেশের আর চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত হবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দিনরাত সমুদ্র ছুঁয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করবে এই রানওয়েতে।

রোববার (২৯ আগস্ট) সকাল ১০টায় ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ প্রকল্পে’র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বেসরকারি বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

তিনি বলেন, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ একটি রানওয়ে রয়েছে। এটি ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে। প্রথমে ৯ হাজার ফুট থেকে আরও তিন হাজার ফুট সমুদ্রকূলে সম্প্রসারণের কথা ছিল। কিন্তু অনেক গবেষণা ও কক্সবাজারের পরিবেশের কথা চিন্তা করে এক হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এটি উন্নীত করা হচ্ছে। সম্প্রসারিত হলে দেশের পর্যটনসহ অর্থ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্য আনন্দের। এ ছাড়া এ বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে একটি অ্যাভিয়েশন হাব বলেও জানান বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

রানওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে কক্সবাজার শহরজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কে বিলবোর্ড, পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানারে ভরে গেছে। সন্ধ্যার পর শহরের মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে রানওয়ে নির্মাণ প্রকল্প (ভিডিও চিত্র)। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ দাঁড়িয়ে অন্য রকম রানওয়ের ভিডিও উপভোগ করছেন।

এদিকে চীনের দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন-জেভি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

রোববার প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তের অনুষ্ঠানে থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বেবিচক জানায়, আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিশেষ এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রানওয়ে সম্প্রসারণকাজ শেষ হলেই এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ওঠানামা করতে পারবে ৩৮০-এর মতো সুপরিসর এয়ারবাস। এই রানওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এই বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক অ্যাভিয়েশন হাব হিসেবে ব্যবহার হবে। আন্তর্জাতিক টার্মিনাল হবে, বিদেশি পর্যটকেরা সরাসরি কক্সবাজার আসার সুযোগ পাবেন। ফলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও গতিশীলতা আসবে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার-এর দৈনিক ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ১৫টির অধিক ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। কক্সবাজার-যশোর রুটে চিংড়ি পোনা সরবরাহ দিচ্ছে কয়েকটি কার্গোবিমান।

তিনি আরও বলেন, সমুদ্র ছুঁয়ে রানওয়ের সম্প্রসারণ প্রকল্প শেষ হলে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বড় বড় উড়োজাহাজ এখানে অবতরণ করতে পারবে। আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিশেষ এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রানওয়ে সম্প্রসারণকাজ শেষ হলেই এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ওঠানামা করতে পারবে ৩৮০-এর মতো সুপরিসর এয়ারবাস। আর আগামী বছর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করারও সম্ভাবনা রয়েছে।

বেবিচক জানায়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। সাগরবক্ষে বিস্তৃত হওয়ার পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এটি হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

আরও পড়ুন: সমুদ্রে জাহাজ চললেও দূষিত হবে না বাতাস!

প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে সরাসরি পূর্ণ লোডে সুপরিসর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা, সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ ক্যাট-১ লাইটিং সিস্টেম সংস্থাপনের ফলে রাত্রিকালীন বিমান পরিচালনা, বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব হবে।

জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট। এটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ ফুটে। সম্প্রসারিত হতে যাওয়া রানওয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুটই থাকবে সমুদ্রের ওপর।

প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিওটিউব, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম। এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে হতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তর বিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তর বিন্যাস। তারপর হবে পাথরে স্তর বিন্যাস এবং নিশ্ছিদ্রকরণ, পিচ ঢালাই। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে এবং প্রাথমিক সমুদ্র হতে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন

পাঠকের মতামত: