কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিশ্বের সব কোরাল রিফের ২০ লাখ ছবি তোলা হয়েছে স্যাটেলাইটে!

 

 

সারা বিশ্বের সমুদ্রে যত কোরাল রিফ আছে, সব কোরাল রিফকে ফ্রেমে বন্দি করা হয়েছে। গবেষকরা কোরাল রিফের অনলাইন ম্যাপ তৈরি করেছে। এই ম্যাপ তৈরি হয়েছে ।

পল অ্যালেনের সংস্থা ‘দ্য অ্যালেন কোরাল আটলাস’ অনেক ধরেই কোরাল রিফ সংরক্ষণ, মেরিন পরিকল্পনা আর কোরাল সায়েন্স নিয়ে কাজ করে। পরিবেশ দূষণের কারণে সারা বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণে গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দ্য অ্যালেন কোরাল আটলাসের প্রতিনিধিদল বলছে, প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইট থেকে কোরাল রিফের ভালো রেজুলেশনের ছবি তোলা হয়েছে। এই ছবিগুলো কোরাল রিফ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেবে। পাশাপাশি বালু, পাথর, সামুদ্রিক উদ্ভিদের বিস্তারিত জানা যাবে এই ছবির মাধ্যমে। এই ম্যাপ তৈরি হয়েছে ৫০ ফিট বা ১৫ মিটার গভীরের কোরাল রিফের ছবির মাধ্যমে। এই ছবিগুলো কোরাল রিফ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন, আর কোরাল পুনরুদ্ধার করতেও সহায়তা করবে।

অ্যাটলাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেগ আসনার জানান, পুরো কোরাল রিফের ম্যাপ বানাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা আরও তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। স্যাটেলাইট আর সফটওয়্যার দিয়ে সঠিক তথ্য তুলে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। কোরাল যে ধ্বংসের পথে, সেই বিষয়গুলো নিয়েও গবেষণা চালিয়েছেন তারা। আসনার জানান, এর আগে কখনো কোরাল রিফ নিয়ে এত বিস্তারিত গবেষণা হয়নি।

 

২০১৭ সালে শুরু হয় এ প্রকল্প। দ্য অ্যালেন কোরাল আটলাসের প্রতিনিধিদল বলছে, বিশ্বের অবশিষ্ট কোরাল রিফগুলোকে বাঁচাতেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এই প্রকল্পে খরচ পড়েছে ৯০ লাখ ডলার। এই ম্যাপ যে কেউ দেখতে পারবেন অনলাইনে।

সাগর-মহাসাগরের তলায় একটি আশ্চর্য, রহস্যময় জগৎ আছে, যেখানে মানুষ বসবাস না করলেও আছে বিচিত্র সব প্রাণী। আর তাদেরই অন্যতম ‘কোরাল’ বা প্রবাল- এক ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী।

মৃত কোরালের দেহ স্তূপাকারে জমা হয়ে নানা আকৃতির কাঠামো তৈরি করে। যাকে বলা হয় ‘কোরাল রিফ’ বা প্রবাল দ্বীপ। কোরাল রিফ গঠন নির্ভর করে সাগরতলের পরিবেশের ওপর। বিশেষ করে তাপমাত্রা ও ক্ষুদ ক্ষুদ্র জীবের উপস্থিতিই জানান দেয় যে, সেখানে এ ‘সাগর রত্ন’ আদৌ তৈরি হবে কিনা।

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরাল রিফ, যা প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে অবস্থিত। দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ মাইল। আয়তন প্রায় ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের কারণে প্রবাল প্রাচীরটিকে মহাকাশ থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়। প্রায় ২ হাজার ৯০০ ছোট ছোট খণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত এ বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বে কুইন্সল্যান্ডে অবস্থিত।

বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অন্যতম। অস্ট্রেলিয়ার পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও দ্বীপটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। অন্যান্য বড় প্রবাল দ্বীপের মধ্যে আছে রেড সি কোরাল রিফ। এটি ইসরাইল ও মিসরের নিকটবর্তী রেড সি-তে অবস্থিত।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কোরাল কার্বন ডাই অক্সাইডকে কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এ কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইডকে বলে কার্বন ডাই অক্সাইডের কংকাল। বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস কমে যাচ্ছে।

আলো জ্বালা কোরাল সমুদ্রের আলোর উৎস হিসেবেই নয় বরং এর ওপর জন্মানো শৈবালের খাদ্য উৎপাদনের জন্য সালোকসংশ্লেষণে সাহায্য করে। প্রবাল প্রাচীর সমুদ্রসৈকতকে ঘূর্ণিঝড়, ঢেউ, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।

পাঠকের মতামত: