কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইলিশের প্রজনন কমতে পারে লবণাক্ততায়

সাগরের লোনাপানি ছেড়ে ইলিশ তখন এই স্বাদুপানিতে চলে আসে ডিম ছাড়তে। কিন্তু বরিশাল অঞ্চলে নদনদীতে এবার পানির লবণাক্ততা বেশি দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রাও কম। ডিম ছাড়ার মৌসুমে পানির এই পরিবর্তনে ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা, বরগুনার পায়রা এবং পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাসের প্রমাণ মিলেছে। অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী বায়োকেমিস্ট মুনতাসীর রহমান জানান, এ বছরের জুলাইয়ে কীর্তনখোলা নদীর পানি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতি লিটার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ শতকরা ১ দশমিক ৮ ভাগ। আগস্টে একই নদীর প্রতি লিটার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল শতকরা ২ দশমিক ২০ ভাগ। লবণাক্ততার স্ট্যান্ডার্ড মানমাত্রা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে সহনশীল মান শূন্য দশমিক ১২ হতে পারে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে লবণাক্ততা বেড়েছে দশমিক ৪ ভাগ।

এদিকে কীর্তনখোলায় দ্রবীভূত অক্সিজেনও কমেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, জুনে কীর্তনখোলা নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ছিল প্রতি লিটারে ৫ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম। কিন্তু আগস্টে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটারে ৩ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম।

মুনতাসীর রহমান বলেন, আগস্টে তাঁরা বরগুনার পায়রা এবং পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর পানির মানমাত্রাও পর্যবেক্ষণ করেছেন। পায়রা নদীতে

আগস্টে প্রতি লিটার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৬ ভাগ। অপরদিকে লোহালিয়া নদীতে একই সময়ে প্রতি লিটার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫ ভাগ।

জানতে চাইলে বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ইলিশ বিশেষজ্ঞ বিমল চন্দ্র দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ মৌসুমে এমনিতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে ইলিশ আহরণ। এভাবে নদীতে লবণ বাড়লে আগামী অক্টোবরে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ডিম ছাড়তে নদীতে আসবে না। কেননা, ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশের স্বাধুপানি দরকার।

কীর্তনখোলা নদীতে দুই যুগ ধরে ইলিশ ধরেন জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ইলিশের এমন আকাল দেখেননি। গত বছরও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে।

কীর্তনখোলা নদীতীরের ত্রিশগোডাউনে বসবাসকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া বলেন, নদীর পানি এক যুগের মধ্যে এমন লবণাক্ত হতে দেখেননি। এই ভরা বর্ষায়ও নদীর পানিতে লবণ থাকায় গৃহস্থালির কাজেও ব্যবহার করতে পারছেন না।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, বৃষ্টি বেড়ে গেছে, নদীতে পানিও বাড়ছে। তারপরও লবণাক্ততা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার যুক্তি রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এতে জোয়ারে সমুদ্রের নোনাপানি নদীতে ঢুকে পড়ছে। আবার উজানে ফারাক্কাসহ অন্যান্য বাঁধের কারণে মিঠাপানির প্রবাহ কম। এসব কারণেই মূলত বাড়ছে লবণাক্ততা।

আশরাফুল হক আরও বলেন, মিঠাপানি না পেলে ইলিশের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হবেই। শুধু ইলিশ নয়, অন্য অনেক প্রজাতির মাছও কমে যাবে।

পাঠকের মতামত: