কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নাম ছাড়া কিছুই নেই কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির

‘প্রতিষ্ঠাতা’ পদ ও মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের রশি টানাটানিসহ নানা অনিয়মের কারণে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (সিবিআইইউ) কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাস করে বের হয়েও উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির সুযোগ না পেয়ে পথে পথে ঘুরছেন তারা। বিগত দেড় বছর ধরে এ অচলাবস্থা হলেও করোনার কারণে সবকিছু আড়ালেই ছিল। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার তোড়জোড় শুরু হওয়ার পরই পর্যটন নগরীর সর্বোচ্চ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অচলাবস্থা ও রশি টানাটানির বিষয় দৃশ্যমান হয়েছে।

শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকৃত উপাচার্য (ভিসি)-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা। ২০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে স্টুডেন্ট ফোরামের ব্যানারে ফুঁসে উঠেছে তারা। এমন সব অনিয়ম ও অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা সব ধরনের ফি বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করে। এখন প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

স্টুডেন্ট ফোরামের মুখপাত্র হোসাইন মূরাদ প্রিন্স বলেন, ৭ বছর আগে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি সুনামের সঙ্গে চলেছে। কিন্তু বিগত বছর দেড়েক ধরে নাম ছাড়া কিছুই নেই। আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, উপাচার্য নেই। পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না অস্থায়ী প্রত্যয়নপত্রও। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পড়াশোনা শেষ করে বের হওয়া সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির সুযোগ না পেয়ে পথে পথে ঘুরছেন। আমরা ইউনিভার্সিটির নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সুষ্ঠু সমাধান পাইনি। আমাদের প্রথম দাবি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি। আর মিথ্যা আশ্বাস নয়, কার্যকরী কিছু দেখতে চাই।

সিবিআইইউ সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উখিয়ার জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দেন। এরপরই ১৫ সেপ্টেম্বর অনুমোদন মিলে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির। যদিও এর আরো বছরখানেক আগে থেকে সিবিআইইউ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান ছিল। অনুমোদন পাবার পর শহরের কলাতলীর মোড়ে ডায়নামিক কক্স কিংডম নামে একটি হোটেলে অস্থায়ী ক্যাম্পাস করা হয়। সে বছরের অক্টোবরে ক্লাস শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে এ পর্যন্ত ওই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। তার মধ্যে এক হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী পাস করে বের হয়েছেন। বর্তমানে ৮০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

ইউনির্ভার্সিটিতে বর্তমানে আইন, ইংরেজি, বিবিএ, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল ও হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ম্যানেজমেন্ট (এইচটিএম), লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সাইন্স এবং ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ রয়েছ। তবে বিবিএ ও আইন অনুষদে বিভাগীয় প্রধানসহ কয়েকজন শিক্ষক থাকলেও অন্যান্য অনুষদ ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান দিয়ে চলছে। এইচটিএমে বিভাগীয় প্রধান ছাড়া কেউ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওই ইউনিভার্সিটি মানেনি ইউজিসির কোনো নির্দেশনা। ৮ বছরে হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস, মেলেনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য। দেয়া হয়নি কোনো সমাবর্তন। শুধু আশার বাণীতে প্রতিবছর ভর্তি করা হয়েছে নতুন শিক্ষার্থী। এদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউজিসি কয়েকদফা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে নানা নির্দেশনা দিলেও সেগুলো মানেনি কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ২০১৮ সালে ইউজিসি দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু ও সমাবর্তনের নির্দেশনা আসে। কিন্তু সেই নির্দেশনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের চুক্তি শেষে ভবনটির ৩য় ও ৪র্থ তলা ছেড়ে দিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

বিজ্ঞাপন

এরপরের বছরের শুরুতেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। একই বছরের মে মাসের মধ্যভাগ থেকে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর একে একে বের হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা দুর্নীতি। শুরু হয় মূল উদ্যোক্তার দাবি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ। কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকার আইন থাকলেও এখানে রয়েছে দুটি ট্রাস্টি বোর্ড। দুই পক্ষের সদস্যরাই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল উদ্যোক্তা ও ট্রাস্টি বলে দাবি করছেন।

ইউসিজির নথিপত্র যাচাই করে দেখা য়ায়, ২০১৩ সালে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের (বিওটি) অনুকূলে ‘কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। আর সেক্রেটারি ছিলেন লায়ন মো. মুজিবুর রহমান। বাকি আট সদস্যের মাঝে সেক্রেটারির স্ত্রী, ভাই, ভাতিজা ও শ্যালকসহ নিকটাত্মীয় ও চেয়ারম্যানের স্ত্রী- ছেলে। এজন্য মূলত ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ ও সেক্রেটারি লায়ন মুজিবের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হতো সিবিআইইউ।

এদিকে, আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালে ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ ও সেক্রেটারি লায়ন মুজিবুর রহমানের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। দ্বন্দ্বের জেরে গতবছর বিওটির এক সভায় সালাহউদ্দিন আহমদকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী ও ছেলেকেও ট্রাস্ট থেকে বের করে দেয়া হয়। অন্যদিকে সালাহউদ্দিন আহমদ সেক্রেটারি লায়ন মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান ও প্রতিষ্ঠাকালীন সব সদস্যকে বাদ দিয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ তার আস্থাভাজনদের নিয়ে নতুন একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। সেই বিওটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দুটিই দাবি করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। বর্তমানে দুটি ট্রাস্ট আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সূত্র মতে, চলতি বছরের জুন মাসে নানা একাডেমিক, আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে সিবিআইইউতে

পাঠকের মতামত: