কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চাঁদে জমি বিক্রি করছেন যিনি

সম্প্রতি চাঁদে জমি কেনার বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। অনেকে বিষয়টিকে মজা হিসেবেই দেখছেন। কেউ কেউ ভাবছেন এটি চাপাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। তবে এরই মধ্যে বিশ্বের নানা দেশের মানুষ চাঁদে জমি কিনেছেন। চাঁদের মানচিত্রে নিজের নামে বরাদ্দ জায়গাটুকু দলিলসহ বুঝে নিয়েছেন।

চাঁদের জমি বিক্রি করেন মার্কিন নাগরিক ডেনিস হোপ। চাঁদে জমি কেনার জন্য তার ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ বেশ জনপ্রিয়। প্রতি একর জমির দাম শুরু ২৫ ডলার থেকে। শেষ ৫০০ ডলারে। বেশি দামেরও জমি আছে। এক একটি মহাদেশের সমান সেই জমির দাম প্রায় ১৪ কোটি ডলারের কাছাকাছি। তবে জমি যেমনই হোক, সব জায়গা থেকেই পৃথিবীকে সমানভাবে দেখা যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন হোপ।

জানা গেছে, জমি কেনার পর ক্রেতাকে একটি বিক্রয় চুক্তি, কেনা জমির একটি স্যাটেলাইট ছবি এবং জমিটির ভৌগলিক অবস্থান ও মৌজা-পর্চার মতো আইনি নথিও পাঠিয়ে থাকে সংস্থাটি। এ ছাড়া কেউ যদি বেশি ব্যয় করতে রাজি থাকে, তাহলে তাদের জন্য চাঁদের সম্পূর্ণ মানচিত্র এবং অন্যান্য তথ্যও সরবরাহ করা হয়।

মার্কিন এই নাগরিক দাবি করে আসছেন, সৌরমণ্ডলের সব গ্রহের মালিক তিনি। ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হয়ে গত ৪১ বছর ধরে ৬০ লাখের বেশি ক্রেতার কাছে চাঁদের ৬১ দশমিক ১ কোটি একর জমি বিক্রি করেছে লুনার অ্যাম্বাসি। চাঁদের সবচেয়ে বৃহদাকৃতির জমির অংশটিতে ৫৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৪০ একর জায়গা আছে। যদিও সেই জমির ক্রেতা এখনও পাননি হোপ। বেশি চাহিদা ১৮ শ থেকে ২ হাজার একরের জমিগুলোর।

ক্রেতার ব্যাপারে কোনো বাছবিচার নেই ডেনিস হোপের। তারকা থেকে সাধারণ চাকরিজীবী, সবাই রয়েছেন তার ক্রেতার তালিকায়। তিনি দাবি করেছেন, তার কাছ থেকে ৬৭৫ জন নামি তারকা জমি কিনেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জিমি কার্টার এবং রোনাল্ড রিগ্যান।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা ছাড়াও জাপান ও কোরিয়ায় রয়েছে কার্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে নেভাদায় লুনার অ্যাম্বাসির মূল কার্যালয়। সব মিলিয়ে ডজনখানেক কর্মী কাজ করেন সেখানে। জমির চাহিদার তারতম্য অনুযায়ী, কর্মী সংখ্যা বাড়ে-কমে। জাতিসংঘ বলেছিল, বিশ্বের কোনো দেশ বা কোনো দেশের সরকার সৌরজগতের কোনো মহাজাগতিক বস্তুর ওপর নিজেদের অধিকার, মালিকানা বা আইনি স্বত্ব দাবি করতে পারবে না। ১৯৬৭ সালে আনা ওই প্রস্তাবে পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশ সম্মতি দিয়েছিল। তবে ওই প্রস্তাবে কিছু অসম্পূর্ণতাও ছিল।

মহাজাগতিক বস্তুর ওপর সরকার বা দেশের অধিকার নিয়ে কথা বললেও এমনটা কোথাও বলা ছিল না যে, কোনো ব্যক্তি এই দাবি করতে পারবেন না। হোপ ওই অসম্পূর্ণতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে চাঁদের মালিক দাবি করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে জাতিসংঘকে একটি চিঠি লেখেন হোপ। আশির দশকের শুরুর দিকে লেখা ওই চিঠিতে চাঁদের জমি এবং খনিজসম্পদের মালিকানা দাবি করেন তিনি। সে চিঠির জবাব আজও আসেনি। জাতিসংঘের মৌনতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে চাঁদের জমি বিক্রি করতে শুরু করেন হোপ।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জমি বিক্রির প্রক্রিয়া বৈধ হতে পারে না। কারণ, প্রশাসন বা সরকার ছাড়া কেউ জমি বিক্রি করতে পারে না। বিষয়টি জানার পরই অবশ্য দ্রুত পদক্ষেপ নেন হোপ। নিজস্ব সরকারই তৈরি করে ফেলেন তিনি। নাম দেন গ্যালাকটিক ইনডিপেনডেন্ট গভর্নমেন্ট। হোপ সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট। ২০০৯ সালে হোপের গ্যালাকটিক গভর্নমেন্ট মার্কিন সরকারের স্বীকৃতিও পায়। খোদ হিলারি ক্লিনটন স্বাক্ষর করেছিলেন গ্যালাটিক ইলডিপেনডেন্ট সরকারের স্বীকৃতিপত্রে।

সরকার থাকলে সংবিধান লাগে, দরকার নিজস্ব মুদ্রা, পতাকা, প্রতীকসহ আরো অনেক কিছু। হোপ সেগুলোর সবই বানিয়েছেন। তার গ্যালাকটিক সরকারের নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। আছে নিজস্ব আইন-কানুনও। ৪১ বছরের ব্যবসায়ে এখন আর অবশ্য শুধু চাঁদে থেমে নেই হোপ। পৃথিবীর উপগ্রহ থেকে তার ব্যবসা ছড়িয়েছে ভিন্ন গ্রহেও। একই আইনের ফাঁক গলে এখন বুধ, মঙ্গল, শুক্র, প্লুটো এমনকি বৃহস্পতির উপগ্রহ আইওতেও জমি বিক্রি করছেন তারা। হোপ জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তার প্রতিষ্ঠানের মহাজাগতিক জমির ব্যবসার পরিসর আরো বাড়বে।

প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, জাতিসংঘের ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ চুক্তি অনুযায়ী, চাঁদে কেউ জমি কিনতে পারে না। তবে কিছু দেশের নাগরিক আইন বা চুক্তির ফাঁকফোকর বের করে চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে জমি বিক্রির নাম করে পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা কিনছেন, তারা আসলে চাঁদে জমি কিনছেন, না তৃপ্তির ঢেকুর কিনছেন! খবর কালেরকন্ঠ।

পাঠকের মতামত: