কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আজ মহান বিজয় দিবস: বিজয়ের ৫০ অহংকারের ৫০

 

বাঙালি জাতির শৌর্যবীর্য আর বীরত্বের গৌরবদীপ্ত অবিস্মরণীয় দিন মহান বিজয় দিবস আজ। আজ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বুক ভরে বিজয়ের নিঃশ্বাস নেয়ার দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের স্মৃতিবিজড়িত দিন। বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের দিন।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো বেশি অবদান রেখে দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজয়ের ৫০ বছর মানেই গর্বের ৫০। লাখো শহীদের ত্যাগে যে বিজয় সেদিন অর্জিত হয়েছে সেই আবহেই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে গোটা দেশ প্রস্তুত। কোনো কমতি নেই আয়োজনে। লাল সবুজে মিলেমিশে একাকার নগরী। জাতি বিজয়ের কারিগর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত ।

এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ’৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল-ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন, ’৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯ এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬ দফা ভিত্তিক ’৭০ এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন প্রভূত ঘটনা প্রবাহের মধ্য স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করে এবং পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। সে হিসাবে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির দিন আজ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে আজ থেকে দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ আয়োজন করেছে।

অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন আজ অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৪টায় এবং অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় থাকবে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। শপথগ্রহণ শেষে আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

জাতীয় পর্যায়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে।

নগরীর জামালখান মোড়ে বোধনের বিজয় মুহূর্ত উদযাপন : আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পূণ্য করো দহন-দানে’। শিল্পীদের সমবেত গান ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যদিয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের চেতনা’ শিরোনামে বিজয় পূর্ব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর জামালখান মোড়ে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের আয়োজনে বাংলাদেশের ‘বিজয় মুহূর্ত’ উদযাপন করা হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা, স্বাধীনতার বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়তে শিল্পীরা গান-কবিতা পরিবেশনা করেন।
জেলা প্রশাসনের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি : কর্মসূচির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মধ্যে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। নতুন প্রজন্মসহ সকলকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিখায় আলোকিত এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের এ মাহেন্দ্রক্ষণে শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে দেশব্যাপী উক্ত শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় শপথ অনুষ্ঠান নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখ চত্বরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয়ের কর্মসূচি সূচিত হবে এবং সূর্যোদয়ের পর জেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। সকাল ৮টায় নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে জমকালো আতশবাজি ও লেজার শো’র আয়োজন করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: