কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

১৮৮ অভিযানে ৩.৪৮৫ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ

ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সুস্বাদু এই মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশকে ইলিশ উৎপাদনের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে। বর্তমানে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে এই দেশে। মাত্র চার বছর আগেও এই উৎপাদনের হার ছিল ৬৫ শতাংশ। সরকারের নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপের ফলে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর একারণে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি’র লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। ইলিশের প্রজননকে চিহ্নিত করতে নির্দিষ্ট একটি সময়ে সারাদেশে ইলিশের আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। বিশেষ করে সময়টা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। এই সময়ে মা ইলিশরা ডিম পারে। তখনই সারাদেশে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
গত ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে শেষ হয়েছে সরকারিভাবে আসা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সাগরে ইলিশ আহরণ, ক্রয় বিক্রি, মজুদ ও পরিবহন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিলো। এসময় কঠোরভাবে অবস্থানে ছিলেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এরপরেও বিভিন্ন কৌশলে সাগরে মাছ ধরতে যায় অনেক জেলে। অভিযানে ধরাও পড়ছে। আবার অভিযানের ফাঁকফোকর দিয়ে বোটভর্তি অনেক মাছ অধরাই চলে যায়। মাছ জব্দ, মামলা, জাল আটক জরিমানাসহ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান দৈনিক কক্সবাজার’কে জানান, সাগরে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে গত ৬ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে একযোগে ইলিশ আহরণ বন্ধ ছিল। এই সময়ে ইলিশ শিকারী ২৭ হাজার ৯৬৫ জন জেলে পরিবারকে সাহায্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতি পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলা পর্যায়ে সকলকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও অনেকে রাতে সাগরে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু অভিযানে ধরা পড়ে মাছ ও জাল। বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা’র সুফল জেলেরা পাচ্ছে যোগ করেন তিনি।
জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ৮ উপজেলায় মোট ৪৩ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। অবতরণ কেন্দ্র ৪৩৫ বার, বিভিন্ন মাছ ঘাটে ৭৮৪ বার, বাজার ৯৪৬ বার পরিদর্শনে যান মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা। ১৮৮ টি অভিযানে ৩.৪৮৫ মেঃ টন অর্থাৎ ৩ হাজার ৪ শত ৮৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। যার বাজার মূল্য ৩ লক্ষ টাকা। আটককৃত জালের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৮৯৮ লক্ষ  মিটার। ৮ টি মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩ হাজার ৮ শত ৫০ টাকা। পরবর্তীতে সেগুলো ১ লক্ষ ৩ হাজার ৩ শ’ টাকায় নিলামে উঠে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান দৈনিক কক্সবাজার’কে জানান, সদরে ২ হাজার ৫৬০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন এতিমখানা, মসজিদ ও মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়। ২৪ হাজার ৫০০ মিটার জাল জব্দ ও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সদর উপজেলা গেইটের পাশে মাছ বাজারে একটি অভিযানে দুই হাজার কেজি ইলিশ মাছ জব্দ ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বেশ কয়েকটি অভিযানে ছিলাম বলে তিনি জানান।
উপজেলা মৎস্য অফিসের মেরিন ফিসারিজ অফিসার মোঃ আঃ কুদ্দুস বলেন, জেলেদের জন্য মূলত নিষেধাজ্ঞা। তারা বেশি মাছ ধরবে পরিবার নিয়ে সুখে চলবে এটাই সরকার চাই। তাছাড়া সেপ্টেম্বর – অক্টোবর ইলিশ মাছ ডিম পারে। তাদের বংশবৃদ্ধি’র সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষও খেতে পারবে জেলেরাও ভাল আয় করতে পারলো। পাশাপাশি দেশে ইলিশের ঘাটতি মিটিয়ে রপ্তানিতেও ভুমিকা রাখবে বাংলাদেশ।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। এই মূহুর্তে দেশে মোট মাছের উৎপাদনের ১২ দশমিক ২১ শতাংশ ইলিশ, জিডিপিতে যার অবদান বছরে এক শতাংশ। আগের ১০ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।
২০০৩-০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

পাঠকের মতামত: