কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

উখিয়ার ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জালাল আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অযোগ্য ও অবৈধ প্রধান শিক্ষক গফুর আলমের কূটুক্তিমূলক বক্তব্য ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবন্দরা।

এ নিয়ে ১১মে (বৃহস্পতিবার) উখিয়া প্রেসক্লাবের হল রুমে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সভাপতি জালাল আহমেদ চৌধুরীর পক্ষে তার ছেলে ও অফিস সহকারি জাহিদুর রশিদ রানা।

তারা স্কুলের বিভিন্ন দিক উল্লেখ বলেন, বিগত ২০০৭ সালে উখিয়ার পূর্বাঞ্চলে অজুপাড়া গ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয়হীন এলাকায় তৎকালীন উখিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার শামীম আল রাজী ও এলাকার কিছু শিক্ষিত যুবকদের সহযোগিতা নিয়ে আমার দানকৃত জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডেইল পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ছিলেন শফিক আযাদ। বর্তমানে তিনি উখিয়া অনলাইন প্রেস ক্লাবের সভাপতি। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করেন, আবুল কাশেম, বর্তমানে উখিয়া প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে কর্মরত। ২০১২-২০১৩ সনের দিকে আবুল কাশেম সরকারি চাকরী হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে স্ব-ইচ্ছায় অব্যাহতি নেন। তারা ২ জন প্রধান শিক্ষকের পরবর্তীতে মো: গফুর আলম স্কুলে আসে। অথচ সে এখন দাবী করছে তিনিই প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক । এই বিষয়টি ভিত্তিহীন, হাস্যকর ও বানোয়াট।

২০১৪ সালে গফুর আলম চলচাতুরীর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করে নিয়োগ নেন। গফুর আলমের নিয়োগের সময়, বিদ্যালয় সরকার কর্তৃক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়নি। পরবর্তীতে বিদ্যালয় সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি পায় ০১/০১/২০২২ সন থেকে । স্বীকৃতি পাওয়ার পর সরকার ঘোষণা দেন প্রতিষ্ঠান এমপিও ভূক্তির জন্য আবেদনের। গফুর আলম প্রতিষ্ঠান এমপিও ভূক্তির জন্য আবেদনও করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের কাগজ-পত্রাদি যাচাই-বাছাইয়ের পর সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়কে প্রাথমিক ভাবে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিও ভূক্তির জন্য নির্বাচিত করেন বিগত ০৬/০৭/২০২২ সনে । প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত করায় বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত তালিকায় ৬টি শর্ত জোরে দেন। সে ৬টি শর্ত হলো:

১। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়াদি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী কার্যকর হবে।

২ । সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীদের যোগ্যতা/অভিজ্ঞতা নিয়োগকালীন বিধি-বিধান ও সংশ্লিষ্ট পরিপত্র মোতাবেক প্রযোজ্য হবে।

৩ । শিক্ষক নিবন্ধন চালু হওয়ার পূর্বে বিধিসম্মতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীগণ এমপিওভূক্তির জন্য সুযোগ পাবেন।

তবে পরবর্তীতে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও ভূক্তির জন্য অবশ্যই নিবন্ধন সনদ প্রযোজ্য হবে।

৪। এমপিও ভূক্তির জন্য বিবেচিত হওয়া প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য যোগ্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে, সে প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে কাম্য যোগ্যতা অর্জন করলে স্থগিত এমপিও অবমুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

৫। যে সকল তথ্যাদি ভিত্তি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করা হয়েছে, তার কোনটি ভুল বা মিথ্যা প্রমাণিত হলে এমপিও
বাতিলসহ তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৬ । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তির এ আদেশ, জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

তারপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের কাগজ-পত্র ও কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নিয়োগের কাগজ-পত্রাদি সরে জমিনে যাচাই-বাছাই করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন বিগত ০৮/১২/২০২২ সনে।

বিগত ০৬/০৭/২০২২ ও ০৮/১২/২০২২ সনের নির্দেশনা মোতাবেক কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে ৩জন বিশিষ্ট সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিদ্যালয়ের কাগজ-পত্রাদি ও কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজ-পত্রাদি সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করেন গত ১২/০৪/২০২৩ সনে। যাচাই-বাছাই কালে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ১জন শিক্ষক ও ১জন কর্মচারী বৈধতা পায়।

তন্মধ্যে গফুর আলম এর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সরকারি নিয়ম বিধি অনুযায়ী ৬টি শর্ত মোতাবেক না থাকায় তাকে বাদ দেন।
অথচ এখানে ম্যানেজিং কমিটির কোন হাত নেই। যা সরকারি নির্দেশনা ও নিয়ম অনুযায়ী সরকারের প্রতিনিধিগণ সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করেন।

গফুর আলম সে বিষয় জানতে পেরে গত ১২/০৪/২০২৩ তারিখের পর থেকে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন ভাবে বলে বেড়াচ্ছেন যে সভাপতি ১২ লক্ষ টাকা দাবী করে সে দিতে না পারায় তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, ম্যানেজিং কমিটি চাইলেই টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিতে পারেনা। নিয়োগে কিছু সরকারি মানদন্ড আছে। সে মানদন্ড পূরণ হলেই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৪/০৪/২০২৩ তারিখ চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশ পত্র রাতের অন্ধকারে চুরি করে নিয়ে যায়।

বিষয়টি জানতে পেরে জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে অবগত করলে তাঁদের নির্দেশনা মোতাবেক জনৈক ২জন প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে সে যেহেতু সরকারি নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক হতে বাধা হওয়ায় বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে এবং বিদ্যালয়কে ক্ষতির সম্মুখীন থেকে বাঁচাতে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক (গণিত) মোঃ মাফুজ মৃধাকে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব ভার অর্পন করা হয় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মতে । সে থেকে গফুর আলম বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাকে বিদ্যালয়ের নথিপত্র, হিসাব-নিকাশ এবং দাপ্তরিক অনলাইনে ব্যবহৃত ইউজার আইডি ও পাসকোড বুঝিয়ে দেওয়ার দু-দুই বার ঘরে লোক পাঠিয়ে এবং ডাক যোগে অবগতি পত্র পাঠানো হয়েছে । সে অধ্যাবধি স্কুলের কোন নথিপত্র, হিসাব-নিকাশ সহ দাপ্তরিক অনলাইনে ব্যবহৃত ইউজার আইডি ও পাসকোড এখনো পর্যন্ত জমা দেননি । অবগতি পত্র পাওয়ার পর থেকে সে শুরু করেছে নানাবিধ ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন দপ্তরে ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও বাতিলের পায়তারা, সহ স্কুল উচ্ছেদের নগন্য পায়তারার মত বিষয়ও।

পরবর্তীতে গত ০৮/০৫/২০২৩ খ্রি. তারিখ বিদ্যালয়ের পূর্ব নির্ধারিত শিক্ষার মান উন্নয়ন বিষয়ক অভিভাবক সমাবেশ বানচালের জন্য গফুরের নির্দেশনায় পালিত কিছু যুবকদের দ্বারা মানববন্ধনের নামে।

সে উশৃংখল যুবকরা অভিভাবক সমাবেশে বসা ও স্কুলে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জোর করে স্কুল ক্যাম্পাস থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে মাইকে উচ্চ স্বরে আমাদের নামে ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নামে কটুক্তি মুলক ও বানোয়াট কথা বলে শ্লোগান ধরে উখিয়া ষ্টেশনে মিছিল করে এবং আমার ও আমার পরিবার নিয়ে কুটুক্তি মুলক কথাবার্তা বলে। যাহা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তাতেও সে শ্রান্ত না হয়ে এখন বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের হুমকি-ধুমকি দিচ্ছে যে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের না পাঠাতে। হাঁকাবকা করছে যে, এখান থেকে স্কুল ভেঙ্গে ফেলা হবে, এখানে কোন স্কুল থাকবেনা। মূলত সে যতদিন দায়িত্বে ছিল সে স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, ম্যানেজিং কমিটির সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকারি উপবৃত্তি পেয়ে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ বাণিজ্য সহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে টাকা কামানো ছিল তার নিত্যদিন।

পরিশেষে সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান মিথ্যাচার, বানোয়াট, অপপ্রচার সহ নিকৃষ্ট মননের মানুষের কথায় কান না দিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়হীন এলাকায় বিদ্যালয় রক্ষার্থে এবং বিদ্যালয়ের মঙ্গলার্থে সুন্দর পরামর্শ ও সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

পাঠকের মতামত: