কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার সাগরপাড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গা কবুতর

ইমাম খাইর::

করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন কক্সবাজার। পর্যটক যাওয়া নিষিদ্ধ সাগরপাড়সহ সব বিনোদন স্পটে। রাজত্ব কেবল সাগরলতার। খেলছে ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গা কবুতর বা গাঙচিল। লাল কাঁকড়ার দলও চোখে পড়ছে। ক’দিন আগে সাগরে নৃত্য করে ডলপিনের দল। সব মিলিয়ে সাগরপাড় পেয়েছে তার আসল প্রকৃতি।

কক্সবাজার শহরের দরিয়া নগর সমুদ্র সৈকতের বড়ছরা খালের মোহনায় শুক্রবার (১০ এপ্রিল) দেখা মিলছে একদল ধবধবে সাদা গাঙচিল। এ দৃশ্য অনেকের নজর কাড়ে।

সমুদ্রের পানির উপর একঝাঁক গঙ্গা কবুতরের ওড়াউড়ির দৃশ্য ধারণ করেন প্রকৃতিপ্রেমী আহমদ গিয়াস। প্রকৃতির এমন দৃশ্যটি তিনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে আপলোড দেন। চৈত্রের খরতাপে সচরাচার এমন দৃশ্য ভার।

শুধু সৈকত নয়, সৈকতের চেয়েও আরো বহুগুণ পাখি এখন বাসা তৈরি করেছে সৈকত সংলগ্ন পাহাড়ের খাড়া ঢাল ও পাহাড়ী বনাঞ্চলে। নানা রঙের ও জাতের পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠেছে লোকালয়ও।

প্রকৃতি প্রেমীরা বলছে, এক মাস আগেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত লাখো পর্যটকের সমাগমে ক্লান্ত ছিল। কিন্তু ক্লান্ত সৈকত এখন পাল্টে গেছে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতজুড়ে এখন কেবলই নির্জনতা। সাগরের ঢেউয়ের গর্জন ছাড়া আর কোন কোলাহল নেই। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় মানুষ যখন ঘরে ঘরে বন্দি, প্রকৃতি তখন মুক্ত।

কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরের প্রস্তাবিত অভয়ারণ্যের পাহাড়ের ঢালে গর্ত খুঁড়ে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে কয়েক প্রজাতির পাখি। প্রজননের জন্য এখন নতুন করে ফিরেছে সুঁইচোরা, ঘুঘু, বুলবুলি, দোয়েল, হাড়িচাচা, মাছরাঙা ও শালিক।

মূলত শীতকালেই এ পাখি বেশি দেখা যায়। তবে সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সমুদ্রে নির্জনতার সুযোগে পাখিগুলো আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন পরিশেষবাদিরা।
এর আগে সৈকতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর সাগরলতা বাঁধতে থাকে বালিয়াড়ি। সৈকতের কিনারজুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় ডলফিন।

দরিয়ানগর বার্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, একসময় যেখানে জেলে সেখানেই গঙ্গা কৈতর দেখা যেত। এদের একেকটি দল অতিথির দলের চেয়েও অনেক বড়। তবে কয়েকডজন পাখির ছোট দলও দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত ফিশিং বোটের পিছু নিত। সৈকতের জীববৈচিত্র ধ্বংস হওয়ার কারণে এগুলোর সংখ্যা আশংকা জনক হারে কমে গেছে।

প্রকৃতিপ্রেমী সাংবাদিক আহমদ গিয়াস বলেন, করোনা লকডাউনে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো গত ১৮ মার্চ থেকে যেন মৃত্যুপুরী। লাখো মানুষের বিচরণে যে সৈকত ছিল সদা জনারণ্য; তা এখন জনমানব শূণ্য। কিন্তু সৈকতের এ নজিরবিহীন নির্জনতার পক্ষকাল পার হওয়ার আগেই ডানা মেলতে শুরু করেছে প্রকৃতির রাজ্য। এখন নির্জন সৈকতে গেলেই ধরা পড়ে প্রকৃতির রাজ্যের বাসিন্দাদের অবাধ রাজত্ব।

এ স্বতন্ত্র বাস্তুরাজ্যের উদ্ভিদগুলো এখন নানা জাতের পাখি আর প্রাণীর বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে চলেছে। আর সেই পরিবেশ পেয়ে দলে দলে ফিরে আসছে এক সময় হারিয়ে যাওয়া পাখিসহ অন্যান্য সমুদ্র উপকূলীয় প্রাণীগুলো।

আহমদ গিয়াস বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর বড়ছড়া খালের মোহনায় শত শত গঙ্গা কবুতর দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে ‘গঙ্গা কৈতর’ নামে পরিচিত এ পাখিটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও নদী উপকূলে একক প্রজাতি হিসাবে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত। কিন্তু আমাদের দেশীয় জাতের এ পাখিটি পরিবেশ থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে প্রতিবছর শীতের আগে ও বসন্তকালের শেষদিকে কিছু সময়ের জন্য পাখিটিকে দরিয়ানগর বড়ছড়া খালের মোহনায় বিচরণ করতে দেখা গেলেও এবারের নির্জনতায় তাদের প্রাণোচ্ছ্বাস অন্য ধরনের।

তিনি বলেন, করোনা সতর্কতায় লকডাউনের কারণে নির্জীব কক্সবাজার শহরের পর্যটন এলাকা। সৈকতও জনমানব শূণ্য। আর এ নির্জন সৈকতই হয়ে ওঠেছে এখন প্রকৃতির রাজ্য। সৈকতের উদ্ভিদগুলো এখন বিনাবাধায় ডালপালা মেলছে, সেখানে নেমেছে নানা জাতের পাখির ঢল। ঢেউয়ের গর্জন আর পাখির কলকাকলী ধ্বনির মাঝে এখন প্রকৃতির এক অন্য রকম অনুরনন।

পাঠকের মতামত: