কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ওশান গ্রুপের এমডি ও দেশের বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা-দানবীর একজন স্বপ্নবাজ আলী আজম বাবলার চীর বিদায়

বিশেষ প্রতিবেদক, কক্সবাজার::

‘যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, চুকিয়ে দেব বেচা কেনা, মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা…..’
সত্যি গানের এই কলির মতোই আমাদের মাঝ থেকে চীর দিনের জন্য হারিয়ে গেলেন দেশের বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা, পর্যটন ব্যবসায়ী, কবি ও সাহিত্যিক, ওশান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জাতীয় দৈনিক স্বাধীনমত পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. খন্দকার আলী আজম বাবলা। সত্যি, কক্সবাজারে তার পদচিহ্ন আর পড়বেনা।

কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের প্রসারে তাঁর স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল।  ১৩ এপ্রিল (সোমবার) সকাল পৌনে ১১টায় ঢাকার মিরপুরস্থ আল হেলাল নামের ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (লাইফ সাপোর্টে) তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি……রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।

তিনি স্ত্রী, ৩ কন্যা, ১ ছেলে, ৫ ভাই, ৩ বোন, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এর আগে গত ৯ এপ্রিল তাঁর শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উক্ত ক্লিনিকে ভর্তি করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিস, বাত-ব্যাথা ও হার্টের রোগে ভুগছিলেন। এদিন মাগুরা জেলার শ্রীপুর তারাওজিয়েল গ্রামের বাড়ী সংলগ্ন কবরস্থান মাঠে বাদে মাগরিব মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্টিত হয়েছে। জানাজায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ স্থানীয় শোকাহত মানুষ শরীক হন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

এদিকে পিতা মরহুম আবদুস সামাদ পুলিশের চাকুরী করার সুবাধে ড. খন্দকার আলী আজম বাবলা কুষ্টিয়ার জেলার কুমারখালী গ্রামে ১৯৬১ সনের ৩এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর গ্রামের বাড়ী মাগুরা জেলার শ্রীপুর তারাওজিয়েল। তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ উদার মনের মানুষ। ছিলেন একজন শিল্প ও পর্যটন উদ্যোক্তা।

তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা
থেকে এ্যারোমেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় চাকুরী শেষে ২০০৮ সালে দেশে ফিরেই ওশান গ্রুপ প্রতিষ্টা করেন। সেখানকার সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে নিজ দেশের পর্যটন শিল্পকে প্রসার করাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্নের পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে থেমে গেলেন তিনি। স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনিই প্রথম কক্সবাজারের বাইরের লোক হিসেবে ইনানী মৌজায় জমি ক্রয়ের মাধ্যমে স্থানীয় জমির মূল্য বৃদ্ধি এবং জমির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দেশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মাঝে ইনানী তথা কক্সবাজারকে পরিচিত করে তোলেন।

তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইমামের ডেইল, চেপটখালী, মনখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় হত-দরিদ্র
লোকজনসহ মসজিদ মাদ্রাসায় দান করেছেন। ইতোপূর্বে তিনি কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে সী প্যালেসের বলরুমে মতবিনিময় সভা শেষে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে ২০০৮ সালে ‘ওশান গ্রুপ’ প্রতিষ্টার মাধ্যমে দেশের হাউজিং ব্যবসায় চমক সৃষ্টি করেন। এর আগে পর্যটন স্পট কুয়াকাটায় ‘ওশান সিটি’ এবং পরবর্তীতে কক্সবাজারে ‘ওশান আর্থ’ নামের দু’টি প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। কিন্ত ইনানী ও
সোনারপাড়ার প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কিছু মানুষের অদক্ষতার কারনে ‘ওশান আর্থ’ তেমন সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি।

উল্লেখ্য, ড. খন্দাকার আলী আজম বাবলা শুধুই পর্যটন উদ্যোক্তা তা নয়। তিনি একাধারে একজন কবি, সাহিত্যিক, লেখক, কথা শিল্পী এবং টিভি ব্যক্তিত্ব। তাঁর লেখা অসংখ্য গানের পাশাপাশি কবিতার বই, ছোটগল্প, উপন্যাস, গল্প এবং ছোটদের জন্য কবিতার বই রয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রথম উপন্যাস চৈত্র দুপুর, গল্প সমগ্র, উড়াউড়ির দিনগুলি, ছোট গল্প মেঘের কোলে, হলি আর্টিজান, আমি মায়ানমারের মেয়ে, ছোটদের জন্য ‘আমি ভূতের বাবা,’ ছোটদের ভ্রমণ কাহিনী তেকলুর ভূত এ্যাডভেঞ্জার, কবিতার বই প্রথম সকাল, ভালোবাসার ডুবোচর ইত্যাদি।

পাঠকের মতামত: