কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

যে কারণে মানুষের মুখস্ত শক্তি কমে যায়

ইসলামীক ডেস্ক::

জ্ঞান বা ইলম-ই হচ্ছে মানুষের প্রকৃত সম্পদ ও শক্তি। এটি মহান আল্লাহর দেয়া অনন্য নেয়ামত। জ্ঞান বা ইলমের মতো মহামূল্যবান সম্পদ দিয়েই আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষ যখন অন্যায় বা গোনাহে লিপ্ত হয় তখন তার জ্ঞান কমে যায়। গোনাহ করার কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষ থেকে তার জ্ঞান তুলে নেন। শুধু জ্ঞানই নয় বরং গোনাহ করার কারণে মানুষের মুখস্ত শক্তিও কমে যায়।

আল্লাহ তাআলা কোনো গোনাহগারকে জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তির মতো মহামূল্যবান নেয়ামত দান করেন না। যদিও কোনো গোনাহগার জ্ঞানের অধিকারী হয় তবে বুঝতে হবে এটি ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাপরীক্ষা। এসব জ্ঞানী ব্যক্তিরা দুনিয়াতে এমন এমন সমস্যার সম্মুখীন হবে, যা তাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আবার পরকালে এ জ্ঞানরাই তাদের নিজেদের বিপক্ষে গোনাহের প্রমাণ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

গোনাহের কারণে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দেয়া জ্ঞান তুলে নেন। শুধু জ্ঞানই নয় গোনাহ মানুষের মুখস্ত শক্তিও কমিয়ে দেয়। গোনাহের কারণে যে মানুষের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তি কমে যায়, এ ব্যাপারে ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহির দুটি ঘটনা রয়েছে। আর তাহলো-
– ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ, একদিন মদিনা মুনাওয়ারায় হজরত ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর সামনে বসা ছিলেন। তখন তিনি ছোট। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ তাকে দেখেই বুঝতে পারলেন যে, ছেলেটি খুবই মেধাবী ও প্রতিভাবান। তখন তিনি তাকে নসিহত করে বললেন-
‘আমি দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ তাআলা তোমার অন্তরে (জ্ঞান) আলো দান করেছেন; অতএব (সাবধান!) তুমি জ্ঞানের এ আলোকে গোনাহের অন্ধকার দিয়ে নিভিয়ে দিও না।’

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর এ সতর্কতা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, গোনাহের কারণে মানুষের জ্ঞান লোপ পায়। সুতরাং মানুষের উচিত, গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহর দেয়া সেরা নেয়ামত জ্ঞানের মর্যাদা দেয়া। গোনাহমুক্ত থাকতে বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করা।

– ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ এক ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমি একবার আমার শিক্ষক হজরত ওয়াকি রাহিমাহুল্লাহুর কাছে দুর্বল মুখস্ত শক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করলাম। জবাবে তিনি আমাকে নসিহত করলেন-
‘আমি যেন গোনাহের কাজ পরিত্যাগ করি। তিনি আরও জানালেন- জেনে রেখো! জ্ঞান হচ্ছে আলো। আর এ আলো আল্লাহ কোনো গোনাহগারকে দেন না।’

মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ায় নিজেদের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তি বাড়াতে বেশি বেশি নেক আমল করা। গোনাহের কাজ একেবারেই পরিহার করা জরুরি। কেননা গোনাহ মানুষের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তিকে বিলোপ করে দেয়।

তবে গোনাহগারের সাময়িক জ্ঞান দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না, কারণ অনেক গোনাহগার ব্যক্তিও জ্ঞানী হয়ে থাকে। কেননা এ কথার উত্তরে মহান আল্লাহর ঘোষণা রয়েছে। আর তাহলো-
‘আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সেসব নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭৫-১৭৬)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। জ্ঞান আলো ও মুখস্ত শক্তি বাড়াতে গোনাহমুক্ত জীবন-যাপন করা এবং বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা। যেভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাওবার দোয়াগুলো হলো-

– أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ (মিশকাত)

– أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।’ (বুখারি)

– رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।’

নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

– أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’
অর্থ : ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’

নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

– সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজেদের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তি ধরে রাখার জন্য বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত: