কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

নানা অপকর্মে ব্যবহার হচ্ছে ইন্সপেক্টরের ৫ গাড়ি

কক্সবাজারে এনজিওকর্মী রোহিঙ্গা কোটিপতি

ফাইল ছবি

“বিলাসবহুল গাড়িতে পুলিশের লোগো ও স্টিকার লাগিয়ে ব্যবহার করছে অপরাধীরা”

শফিউল্লাহ শফি, কক্সবাজার::

কক্সবাজারে এক ট্রাফিক পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) পাঁচ বিলাসবহুল গাড়িতে পুলিশের লোগো ও স্টিকার লাগিয়ে ব্যবহার করছে এনজিওকর্মী রোহিঙ্গা যুবকের নেতৃত্বে অপরাধী সিন্ডিকেট। গাড়িগুলো নিয়ে নিরাপদে নানা অপকর্ম করে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। বিশেষ করে জায়গায়-জায়গায় পরিদর্শকের হস্তক্ষেপ থাকায় উখিয়া-টেকনাফ থেকে ওই এনজিওকর্মী চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে যাতায়াত করছেন কক্সবাজার শহরসহ চট্টগ্রামেও।

অভিযোগ উঠেছে, এসব গাড়িতে ইয়াবা পাচারসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে এ সিন্ডিকেটটি। সম্প্রতি সিন্ডিকেটের প্রধান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আমিনুর রহমান ও তার প্রধান সহযোগী এনজিওকর্মী রোহিঙ্গা যুবক মনসুর, সেলিম ও আব্দুছ সালামের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর টিআই আমিন প্রতিবাদ নিয়ে তোড়জোড় শুরু করলেও অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

সূত্রমতে, কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর আমিনুর রহমানের মালিকানাধীন ৫টি গাড়িতে পুলিশের লোগো ও স্টিকার লাগানো রয়েছে। আর এ গাড়িগুলো মাদকসেবন, বিক্রি, নারীদের নিয়ে জলসা, প্রতারণা, টার্গেট করে রাস্তা থেকে যানবাহন ধরে মোটা অঙ্কের বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে ব্যবহার করছেন রোহিঙ্গা মনসুর। তিনি একটেড সিস্টার অর্গানাইজেশন রিচ নামের এনজিওতে ফ্লিড অফিসার হিসাবে কাজ করেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর গাড়ি থেকে স্টিকার ও পুলিশের লোগো তুলে ফেলেছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। টিআই আমিনুর যুগান্তরকে জানান, তার একটি মোটরসাইকেল, একটি নোয়া, একটি পাজেরো, একটি ল্যান্ডক্রুজার ও জিপ। গাড়িগুলো তিনি ব্যবহার ও বিক্রির জন্য কিনেছেন। সরকারি মোটরসাইকেল নিয়ে বেশির ভাগ ডিউটি করতে হয় বলে নিজের গাড়িগুলা পড়ে রয়েছে। এছাড়া গাড়ি বেশিদিন পড়ে থাকলে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনসুরসহ অন্যদের চালাতে দিয়েছেন। যদি তারা এ গাড়ি ও পুলিশের নাম কিংবা আমার নাম ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো অপকর্ম করে তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবেন। তবে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, তিনি ৫টির কথা স্বীকার করলেও তার আরও একটি করে মোটরসাইকেল ও ল্যান্ডক্রুজার রয়েছে।

এদিকে মনসুর জানান, তার দুটি প্রাইভেট কার ও ১টি জিপ রয়েছে। তবে প্রাইভেট কার দুটির একটি টেকনাফ হ্নীলা এলাকার তার শ্যালকের। মনসুর বলেন, টিআই আমিনের সঙ্গে আমার গাড়ি আটকের ঘটনা নিয়ে সম্পর্ক হয়েছিল। তার ৫-৬টি পড়ে থাকা গাড়ি নানা কাজেকর্মে অনুমতি নিয়ে চালাতাম। নিউজ হওয়ার পর তার গাড়ি তাকে ফেরত দিয়েছি। পুলিশের গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগানো আছে, সেখানে আমার করার কিছুই নেই। এ গাড়িতে ইয়াবা পাচারের বিষয় সত্য নয়। তবে মাঝে মধ্যে এনজিওতে কর্মরত সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধব চলাচল করেন।

মনসুর দাবি করেন, আমি রোহিঙ্গা নই। আমার বাড়ি প্রথমে ছিল টেকনাফ, পরে শহরের বাদশাঘোনা, তারপর পিটিস্কুল, বর্তমানে উপজেলার হাজীপাড়ায়। আমার বাপ-দাদা ও মাসহ সবাই বিদেশ থাকার কারণে কেউ ভোটার হতে পারেননি। আমরা দুভাই হয়েছি। আমি আপনার পায়ে ধরি। আপনি যত টাকা চান দেব। আর নিউজ করবেন না। কারণ টিআই আমিন এখন সব দোষ আমাদের ওপর দিচ্ছে।

এদিকে এনজিওতে রোহিঙ্গাদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে একটেড সিস্টার অর্গানাইজেশন রিচের এইচআর আয়েশা ছিদ্দিকা জানান, এখানে রোহিঙ্গাদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ পরিচয় গোপন করে কৌশলে চাকরি নিয়ে থাকে তাহলে দয়া করে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। এ সময় অফিসে এসে প্রতিবেদককে কথা বলার অনুরোধ জানান তিনি।

সূত্র জানায়, মনসুরের বাপ-দাদার বাড়ি মিয়ানমারের বুচিদং। তার বাবার নাম জাফর আমির হোসেন। মায়ের নাম দলু বিবি। দীর্ঘদিন আগে অবৈধভাবে এ দেশে ঢুকে টেকনাফের নতুন প্লানপাড়ায় আশ্রয় নেন। পরে কৌশলে এ দেশের নাগরিক পরিচয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সপরিবারে দুবাইতে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে মনসুর মাদক সেবন করে কলেজছাত্রী অপহরণের ঘটনায় সাজা খেটে ২০১৭ সালে কক্সবাজারে ফেরেন। একইভাবে মাদকসেবনের দায়ে মনসুরের ছোট ভাই ওমরও সাজা খেটে ফিরে আসেন। কিন্তু বর্তমানে এনজিওর চাকরি ও পুলিশের গাড়ির ছোঁয়ায় রমরমা অপকর্ম করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। মালিক হয়েছেন বহুতল বাড়িরও। পাশাপাশি নিজে যেমন গাড়ির মালিক হয়েছেন, তেমনি ট্রাফিক ইন্সপেক্টরকেও করেছেন ৬-৭টি গাড়ির মালিক। কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ প্রতিবেদককে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান তিনি। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, টিআই আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকাশিত খবরগুলো দেখেছি। তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র যুগান্তর

পাঠকের মতামত: