কক্সবাজার, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অন্যের উপকারে অপার্থিব সুখ

মানুষ বেঁচে থাকার জন্য একে অপরের সাহায্য প্রয়োজন। পৃথিবীতে কেউ নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবীর ধারাকে এভাবেই তৈরি করেছেন। একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করবে।

ধনী গরিবকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করবে আর গরিব ধনীকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করবে। যদি প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিজ দায়িত্ব আদায় করে, তাহলে সুন্দর ভারসাম্যভাবে সমাজ চলবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের অন্যের উপকারের কথা বলেছেন। অন্যকে দান করতে উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন, দান করলে আল্লাহ তায়ালা রিজিক বাড়িয়ে দেন। কোরআন বলছে, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

 

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কোরো, তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। ’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত : ১৭) আমরা অনেক সময় এমন ধারণা করি যে রিজিক শুধু ধনসম্পদকে বলে। অথচ বিষয়টা এমন না। রিজিক সম্পদের সঙ্গে খাস নয়।

মানুষের জীবনের যত প্রয়োজন রয়েছে সবই আল্লাহপ্রদত্ত রিজিক।

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান আনয়ন করা এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি মহারিজিক। কারণ এই রিজিকের মাধ্যমে সে পরকালে পূর্ণ সফলতা লাভ করবে। ইলম ও হিকমত এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক। ইলম হচ্ছে নবীদের উত্তরাধিকারী জিনিস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তুপ্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান। ’ (সুরা বাকারা,আয়াত : ২৬৯)

সুস্থতা ও নিরাপত্তা এটা আল্লাহর মহান রিজিক। কিন্তু আমরা খুব কম মানুষই এটাকে আল্লাহর রিজিক বলে মনে করে থাকে। নেককার স্ত্রী বান্দার জন্য রিজিক। একজন স্ত্রী তার সঙ্গীকে জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা সহজ করে দেয়।

তেমনি নেক সন্তান আল্লাহর রিজিক। মানুষের ভালোবাসাও আল্লাহর রিজিক।

আপনি যখন অন্যকে দান করবেন তখন আল্লাহ তাআলা আপনার অন্তরে এমন অপার্থিব আনন্দ দান করবেন, যা আপনি অন্য মাধ্যমে শত চেষ্টা করলেও পাবেন না। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক ধরনের বড় রিজিক; যে এমনটা করে সেই আসলে অনুভব করে এর স্বাদ কত মধুর।

অন্যকে দান করা এবং মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকা এটা মানুষকে সুখী করে তোলে। অসহায় ব্যক্তিটির মুখের হাসি মুহূর্তেই আপনার সব ক্লান্তি দূর করে দেবে। আর এর প্রকৃত স্বাদ অনুভব করেছেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এ কারণে ওনারা ওনাদের বড় বড় ধনসম্পদ আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেন না।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদিনার আনসারদের মধ্যে আবু তালহা (রা.) সবচেয়ে বেশি খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে বেশি প্রিয় ছিল। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রা.) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, ‘তোমরা যা ভালোবাসো তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। ’ (আল-ইমরান, আয়াত : ৯২)

তখন আবু তালহা (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যা ভালোবাসো তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। ’ আর বায়রুহা বাগানটি আমার কাছে বেশি প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদকা করা হলো, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য সঞ্চয়রূপে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভালো মনে করেন, তাকে দান করুন। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, মারহাবা! এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি, তোমার আপনজনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও। আবু তালহা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি তাই করব। অতঃপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৬১)

এ ধরনের আরো হাজারো ঘটনা হাদিসের কিতাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

পাঠকের মতামত: