কক্সবাজার, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঈদে যা করবেন

পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির দিন মুসলিম উম্মাহর অন্যতম ঈদ বা উৎসব। এ দিনকে দুনিয়া ও আখিরাতে অর্থবহ করে তুলতে আমাদের কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য  রয়েছে।

 

হাজি সাহেবগণ যেমন কোরবানি দেয়ার পর নখ ও চুল কাটে তেমনি সকল কোরবানিদাতাও নিজ কোরবানি দেয়ার পরই নখ ও চুল কাটবে। এতে প্রচুর সাওয়াব রয়েছে। ইয়াওমে আরাফা তথা জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ একটি রোজা রাখবে তাতে এক বছর আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয় মর্মে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।

 

পবিত্র ভূমি মক্কায়ে মুকাররমায় হাজিরা যেভাবে ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া পাঠ করে তেমনিভাবে ৯ জিলহজ্ব  ফজর হতে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। পুরুষেরা উচ্চস্বরে আর মহিলারা মৃদুস্বরে উচ্চারণ করবে। তাকবীরে তাশরীকের শব্দাবলী হচ্ছে “আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ”। নতুন ও পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদগাহে আল্লাহু আকবর ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে একপথে গমন করে অন্যপথে ফেরা সুন্নাত। নবীজী ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না কিন্তু ঈদুল আজাহার সময় ঈদের নামাজের আগে কিছু খেতেন না। তাই আমাদেরও উচিত ঈদের নামাজের পর কোরবানি করেই কিছু খেতে যাওয়া।

 

কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য খোদাভীরু মন থাকা শর্ত। নির্ভেজাল চেতনা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কোরবানি করতে হবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ তা‘য়ালার নিয়ম হল, তিনি আল্লাহভীরু পরহেজগার লোকের কর্মই গ্রহণ করেন”।

 

সকল দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হতে হবে। সামাজিক লৌকিকতা, অযাচিত প্রতিযোগিতা ও অহমিকা থাকলে কোরবানিসহ কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হবে না। খালিছ নিয়্যতে ইবাদত করার লক্ষ্যে আল্লাহ পাক তার বান্দাদেরকে মুনাজাত শিখিয়ে দিয়েছেন, “বল, আমার নামাজ আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মরণ সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। তার কোন শরীক নেই, এ নির্দেশই আমাকে দেয়া হয়েছে আর আমি হলাম সবার আগে তার অনুগত-ফরমাবরদার। (সূরাতুল আনআম: ১৬২-১৬৩)

 

কোরবানির তাৎপর্য সম্পর্কে আল কুরআনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে “ওসব (কুরবানির) পশুর রক্ত মাংস আল্লাহর দরবারে কিছুই পৌঁছে না। বরঞ্চ তোমাদের পক্ষ থেকে তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া তথা খোদাভীতি। (সূরাতুল হাজ্জ- ৩৭)

 

সাধারণত যাদের উপর যাকাত ফরজ তাদের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। যাকাতের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ মালামাল পুরো এক বৎসর বর্তমান থাকা শর্ত। তবে কোরবানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১, ১২ তারিখ মাগরিব পর্যন্ত সময় নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেও কোরবানি করা ওয়াজিব হিসেবে ধর্তব্য হবে। সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে কোরবানি করার জোর তাগিদ দিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তির সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছেও না আসে (সুনানে ইবনে মাজা ও আহমদ)।”

 

নিজের কোরবানি নিজেই করা সুন্নাত। হযরত আয়েশা ও হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে “রাসূল (সা.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটা তাজা মাংসে ভরা শিংযুক্ত ধূসর বর্ণের মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর দুটির একটি নিজ উম্মত, যারা তাওহীদের সাক্ষ্য দেয় এবং তার নবুয়্যতের প্রতি বিশ্বাস করে তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সা.) ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন (সুনানে ইবনে মাজা)।”

 

অতএব আমাদের মাঝে যারা সক্ষম তাদের উচিত কোরবানি প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের রেজামন্দি হাছিল করা এবং মহাপবিত্র ও ফজিলতময় এ দিনের যথার্থ কদর করা। আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত: