কক্সবাজার, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়

কক্সবাজারে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক পদায়নে ৪ কোটি টাকা আদায়ের মিশন

নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পদায়নকে পুঁজি করে ৪ কোটি টাকা উৎকোচ আদায়ের মিশনে নেমেছে কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে উচ্চমান সহকারি ও ২ অফিস সহকারি প্রকাশ্যে শিক্ষকদের কাছ থেকে এই টাকা দাবি করছে। এর মধ্যে অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায়ও করা হয়েছে।
এতে চরম ভোগান্তিতে থাকা শিক্ষকরা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হয়রানীর শিকার শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সদ্য ঘোষিত ফলাফলে কক্সবাজার জেলায় ৪৮৮ জন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনা মতে, এসব শিক্ষকরা স্ব-স্ব এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূণ্য পদে পদায়ন করা কথা। কিন্তু কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কার্যালয় এখন তার উল্টো পদে হাঁটছে।
হয়রানীতে শিকার শিক্ষকরা নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। শিক্ষকরা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটির উচ্চমান সহকারি রফিক উদ্দিন, অফিস সহকারি মোহাম্মদ ইয়াছিন ও বশির আহমদ শিক্ষকদের পছন্দের বিদ্যালয়ে পদায়নের শর্তে৷
গড়ে ১ লাখ টাকা দাবি করছেন প্রকাশ্যে। এই টাকা না দিয়ে পদায়ন তাদের নিজস্ব ইচ্ছায় হবে বলে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকা অনেক শিক্ষক তাদের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানান অনেকেই।
বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন কক্সবাজার জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন রহমান পিয়ারু। অভিযোগের অনুলিপিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সহ ১৪ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সদ্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষকদের পছন্দকৃত বিদ্যালয়ে পদায়নের জন্য উচ্চমান সহকারি রফিক উদ্দিন, অফিস সহকারি ইসলাম, মোহাম্মদ ইয়াছিন, বশির আহমদ মোটা অংকের উৎকোচ হাতিয়ে নিচ্ছে। দাবি করা উৎকোচ প্রদান না করলে শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানী ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
অভিযোগে বলা হয়, কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারি রফিক উদ্দিনকে দুর্নীতির কারণে ২০১০ সালে শেরপুর বদলি করা হলেও হাইকোর্টে রিট করে তিনি কক্সবাজারে চাকুরি করে যাচ্ছেন। তিনি নিয়োগ, প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি, বদলি নামে উৎকোচ আদায় করে কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। তার গ্রামের বাড়ি পেকুয়ায় বিপুল জমি ছাড়াও রয়েছে ৬ তলার বাড়ি। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরে রয়েছে ৫ তলার বিলাসবহুল বাড়ি। তার অপর সহযোগি ইয়াছিনেরও কুমিল্লায় গ্রামের বাড়ি ও শহরে অনেক জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটটি পছন্দের বিদ্যালয়ে পদায়নের নামে প্রকাশ্যে উৎকোচ আদায় শুরু করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে টানা ৩ দিন কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী, উচ্চমান সহকারি রফিক উদ্দিনের মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার চেষ্টা করা হয়। কোন কোন সময় ফোন বন্ধ, কখনও ফোন কল হওয়ার সাথে সাথে কেটে দেন তারা। এমনকি৷
প্রতিবেদকের পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠানোর পরও কোনভাবেই কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ সংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে দায়ের করা একটি অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসনের কাছেও এসেছে। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পদায়নের একক ক্ষমতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের। জেলা প্রশাসন ওখানে কোনভাবেই যুক্ত নন। তবে এর মধ্যে যেহেতু লিখিত অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে গেছে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই আশা করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: