কক্সবাজার, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটকরাও সরাসরি ট্রেনে যেতে পারবেন * ৫৪টি অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট কোচ কেনা হচ্ছে

কক্সবাজারে পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলছে রেলওয়ে

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সার্বিক চিত্র পালটে যাবে। পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটকরা ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজারে যেতে পারবেন। ট্রেনে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ৫৪টি অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট কোচ কেনা হচ্ছে। সুপ্রশস্ত এসব কোচে বসে পর্যটকরা পাহাড়ঘেরা পথের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনায়াসে দেখতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প ১০২ কিলোমিটারের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন এখন চূড়ান্ত বাস্তবায়নের পথে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ পথে সাধারণ ট্রেনের সঙ্গে ‘পর্যটন বিশেষ ট্রেন’ চলবে। এ জন্য বিশেষ সুবিধাযুক্ত আধুনিক ট্রেন আনা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ সালে এসব ট্রেন ঢাকা-ভাঙ্গা, ঢাকা-যশোর রুটে যুক্ত হবে। ট্রেনগুলো ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারে পৌঁছে যাবে।

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ সবচেয়ে আকর্ষণীয় রুট হবে। এ রুটে সাধারণ ট্রেনের সঙ্গে বিশেষ পর্যটন ট্রেনও আমরা চালাব। এ জন্য অত্যাধুনিক কোচ সংগ্রহ করা হচ্ছে। উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরাও খুব সহজে ট্রেনে কক্সবাজার যেতে পারবেন। সাধারণ মানুষ স্বল্প খরচ ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সেবায় কক্সবাজারে যেতে পারবেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিচারে সেই পথ হবে মনোরম। প্রায় ২০ কিলোমিটার রেলপথ পাহাড় ঘেঁষা। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে ছয়তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে। এটি বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের মতো অনন্য অসাধারণ স্টেশন হবে। ঝিনুক আকারের এ বিশেষ স্টেশনের কাজও শেষ পর্যায়ে।

প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্প আমাদের কাছে স্বপ্নের প্রকল্প। প্রকল্পটি নদী-নালা-খাল বিল, পাহাড় ঘেঁষে হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আমরা আগামী বছরের জুনে কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করছে। আমরা নিখুঁতভাবে দ্রুত কাজ করছি। প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত হচ্ছে। আমরা এক প্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে কোচগুলো সংগ্রহ করছি। অত্যাধুনিক কোচ হবে অনন্য-অসাধারণ। যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো ৮০ কিলোমিটার এবং পর্যটন ট্রেন ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতি নিয়ে চলাচল করবে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী বলেন, এ রুটে অত্যাধুনিক ট্রেন চলাচল করবে। আমরা আধুনিক কোচ সংগ্রহ করছি। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং পুরো রেলপথও ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনে চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে যাত্রীরা সেতু হয়ে ট্রেনে উঠবেন। আবার ট্রেন থেকে নেমে ভিন্ন পথে তারা বেরিয়ে যাবেন। এ জন্য গমন ও বহির্গমনের দুটি পথ তৈরি করা হচ্ছে। গাড়ি পার্কিংয়ের তিনটি বড় জায়গা থাকবে। পর্যটকরা লাগেজ স্টেশনে রেখেই সারা দিন সৈকত ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে আবার ট্রেনে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারবেন। এছাড়া রেলভবনে মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, তারকামানের হোটেল, ব্যাংক, কনফারেন্স হল থাকবে। ঝিনুক ফোয়ারা হয়ে ট্রেন আইকনিক স্টেশনে প্রবেশ করবে। স্টেশনটি ২৯ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে। এর ভবনের আয়তন এক লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট। স্টেশনের বিশেষ সুবিধার মধ্যে রয়েছে-পর্যটকরা চাইলে হোটেল ভাড়া না করে কক্সবাজার ভ্রমণ করে ফিরে আসতে পারবেন। শুধু স্টেশনটি নির্মাণ করতেই ২১৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় শুরুতে এক হাজার ৮৫২ কোটি ধরা হলেও কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পুরো প্রকল্পে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ২৪২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ৯টি স্টেশনের মধ্যে সবচেয়ে বড় কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ পথে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: