কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

পাহাড়ি রোহিঙ্গা ডাকাতরাই বড় বড় ‘ইয়াবা গডফাদার!

আনছার হোসেন, কক্সবাজার::

অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে কক্সবাজারের আলোচিত উপজেলা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক ও মানবপাচার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিত্য ঘটনা। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের অবস্থান সংহত করতে প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া ও রক্তের খেলায় মেতে ওঠে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। মাঝেমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোর অভিযানের মুখে কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও থামানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অপরাধ তৎপরতা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ক্যাম্পে হত্যাকান্ড, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অস্ত্র উদ্ধার, ইয়াবা ব্যবসা, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও অনিয়মতান্ত্রিক কাজে রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র।

তাদের কর্মকান্ডে ভিত স্থানীয় লোকজন ও সাধারণ রোহিঙ্গারা। ১৪ ও ১৬ আর্মড পুলিশ ক্যাম্প এলাকায় আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।গোপন সূত্র মতে, পাহাড়ি রোহিঙ্গা ডাকাতরা বড় বড় ইয়াবার গডফাদার। তারা মূলত ইয়াবার চালান খালাস করতেই ডাকাতের রূপধারণ করেছে এবং বিভিন্ন সময় অপহরণ করেও মুক্তিপণ আদায় করছে।

স্থানীয় শামসুল আলম নামের একজন বলেন, ডাকাতরা স্থানীয়দের চিঠির মাধ্যমে খবর দেয় যে, জাদিমুড়া এলাকায় ডাকাতি হবে! এমন বার্তায় আতঙ্কে রাত কাটাতে হয়েছে স্থানীয়দের। এখন একটু পরিস্থিতি স্বাভাবিক বা শান্ত মনে হলেও কখন কি যে হয়ে যায় তা বলা মুশকিল।

টেকনাফের জুবায়ের নামের আরেকজন জানান, অনেক সময় স্থানীয় মেম্বার, গ্রাম পুলিশ ও সাধারণ মানুষ রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিয়েছেন রোহিঙ্গা ডাকাতের ভয়ে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মীদের দাবি, অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে যে সব সন্ত্রাসি গ্রুপ রয়েছে তারা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম, গফুর উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, উখিয়া-টেকনাফের মানুষ ইয়াবা, সন্ত্রাস, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের থেকে বাঁচতে চায়।

 ক্যাম্পগুলোর ভেতরে ১৫ থেকে ২০টি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে মাদক ব্যবসাসহ নানা অবৈধ কর্মকান্ড।উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলা আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো। ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। মাদকসহ প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ১১ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। এছাড়াও ২০১৭ সালের আগেও বিভিন্ন সময় আরও বেশকিছু রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে। ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র কমান্ডারসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন অনেকটা স্বাভাবিক বলে মনে করছে উখিয়া থানা পুলিশ।

পাঠকের মতামত: