কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে, তীব্র সংকটের আশঙ্কা

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। প্রতিদিনিই বাড়ছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংথ্যা। আগের রেকর্ড ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে রোগীর চাপ। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসার পাশাপাশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকাতেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। আর এতে রাজধানীতেও অক্সিজেনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন না বাড়ায় সামনের দিনগুলোতে সরবরাহ সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিকল্প প্রস্তুতি না নিলে অক্সিজেন সংকট তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় চার গুণ। ঢাকার চেয়ে জেলা-উপজেলায় অক্সিজেন সংকট প্রবল হয়ে ওঠছে। কারণ স্থানীয়ভাবে কোনো উৎপাদন প্রতিষ্ঠান না থাকায় রাজধানীকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে সেখানকার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

এরই মধ্যে খুলনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, ফেনী, বরিশালসহ অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে, সাতক্ষীরা ও ফেনীর সোনাগাজীতে অক্সিজেন সংকটে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শুধু সাতক্ষীরাতেই মারা গেছেন আটজন।

রাজশাহী জেলার হাসপাতালগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়ার মোহাম্মদ আলী কোভিড হাসপাতাল ছাড়া কোথাও নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। রাজশাহী বিভাগের সর্বাধিক কোভিড উপদ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে আক্রান্তদের সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে সীমিত আকারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর স্বজন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুদানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা হচ্ছে।

বরিশাল বিভাগের ৩৯ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের করোনায় গুরুতর রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ সক্ষমতা নেই। বিভাগের মোট ৪৭ হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৮টি হাসপাতালে রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেন্টার।

সিলেটের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বেশিরভাগ হাসপাতালেই তৈরি হয়েছে অক্সিজেন সংকট। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট না থাকায় বড় সিলিন্ডারে চলছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবার কার্যক্রম। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ নিয়ে রোগীর স্বজনদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি চলে।চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতিও অবনিতির দিকে।

অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘সাধারণ সময়ের চেয়ে করোনায় মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশীয় ছোট ছোট কোম্পানিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। বিদ্যমান কোম্পানিগুলো এবং নতুনদের মাধ্যমে কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা আমাদের আছে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে চারটি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন তৈরি করে। এগুলো হচ্ছে লিন্ডে বাংলাদেশ, স্পেক্ট্রা অক্সিজেন, ইসলাম অক্সিজেন ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসেজ। করোনা মহামারির আগে দেশে দৈনিক ১০০ টন মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই চাহিদা ৩০০ টন ছাড়িয়ে গেছে। এই চাহিদা আরো বাড়তে পারে।

এই চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ দেশের বড় বড় হাসপাতালে প্রতিদিন সরবরাহকৃত ৫০ শতাংশের বেশি তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে । প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দিনে ১০০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ টন সরবরাহ দিচ্ছে স্পেক্ট্রা অক্সিজেন। অন্যরা বাকিটা সরবরাহ করছে। বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে ১৩৫ টনের মতো জোগান মিলছে। ভারত থেকে সম্প্রতি লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেক্ট্রার অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৮০ টনের বেশি জোগান কমে গেছে।

অবশ্য অক্সিজেন সংকটের কথা অস্বীকার করে সম্প্রতি সংসদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, সরকারিভাবে দেশে এই মুহূর্তে ৯০০ টন অক্সিজেন মজুদ আছে, দেশের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে আরো ৪৫০ টন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে বর্তমানে সাধারণ ও কোভিড রোগী মিলে ৭০-৮০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিকের সময় সর্বোচ্চ অক্সিজেন চাহিদা ছিল ২১০ টন পর্যন্ত। এই মুহূর্তে দেশে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টন। তিনি বলেন, আগামী মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। জুলাই মাসে অন্য একটি বেসরকারি সংস্থা আরো ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। ফলে দেশে কোভিডকালীন তৃতীয় ঢেউয়ের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে তা মোকাবেলা করতে কোনো সমস্যা হবে না।

পাঠকের মতামত: