নিজস্ব প্রতিবেদক::
উখিয়া-টেকনাফে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণবদলীর সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক কারবারি সিন্ডিকেট ও অপরাধীচক্র। সাগর ও সড়ক পথে প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চলে পাচার হচ্ছে ইয়াবার চালান। সড়ক ও সাগর পথে দায়িত্বরত পুলিশ, কোষ্টগার্ড, বিজিবি, র্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে কিছু কিছু চালান ধরা পড়লেও বড় বড় ইয়াবার চালান অনায়াসে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে উখিয়া-টেকনাফে বিভিন্ন লোকলয়ে প্রকাশ্য ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের ঘটনা নিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ঘটছে। যা নিয়ে খোদ প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন এসময় চট্টগ্রামের সবকটি থানা পরিদর্শন করে নতুন করে বদলী হয়ে আসা পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সান্তনার বাণী শুনিয়ে গেলেন। বললেন, উখিয়া টেকনাফে সংঘঠিত অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে পুলিশের প্রতি মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করে “মানুষের জন্য পুলিশ, পুলিশের জন্য মানুষ” এ অপ্রিয় সত্যটি সাধারণ মানুষ ও পুলিশের মাঝে তুলে ধরেন, পাশাপাশি ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে স্থানীয় সাংবাদিকদের পুলিশকে সহযোগীতা করার পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, এলাকার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি ভূমিকার কোন বিকল্প নাই। তাদের সাথে গ্রামবাসী তথা সুশীল
সমাজের লোকজন যদি পুলিশকে সহযোগীতা করে তাহলে এলাকায় অপরাধ প্রবণতা থাকার কথা
নয়।
ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের আলাপকালে বলেন, এলাকায় কারা ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত তা সাংবাদিকেরাই জানে। তারা যদি তালিকা করে পুলিশকে দেয়,
পুলিশ সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। যেহেতু এখানকার জন্য পুলিশ সম্পূর্ণ নতুন। তাই
তাদেরকে সহযোগীতা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
উখিয়ার পূবার্ঞ্চলীয় জনপদে প্রতিষ্ঠিত মাদক ও চোরাকারবারি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এড. এটিএম রশিদ ও সাধারণ রাসেল উদ্দিন সুজন বলেন, তারা মাদক, চোরাচালান,
চুরি, ডাকাতি তথা সম্পূর্ণ অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে
সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেও কোন কাজ হয়নি। সে সময়ে দায়িত্বরত কিছু পুলিশ সদস্যের
কারণে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বানের পানির মতো এসেছে মিয়ানমারের তৈরি ইয়াবা। পাশাপাশি রকমারি ব্রান্ডের মাদকদ্রব্য। মিয়ানমার থেকে আসা এসব মাদক দ্রব্য সেবন করে পিতা-পুত্রের মধ্যে সংঘাত, নারীর প্রতি সহিংসতা ও লোকালয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসেনি।
রাসেল উদ্দিন সুজন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি বর্তমান
(গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক) রাজাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া একটি বাড়ীতে
শালিসী বৈঠকের পর নিজ বাড়ীতে ফেরার পথে স্থানীয় মাদকসেবী ও চোরাকারবারি শাহজাহান
অপরাপর ৭/৮ জন দুস্কৃতিকারী অর্তকিত ভাবে হামলা চালিয়ে ওই প্রভাষককে গুরুতর আহত করে।
এনিয়ে উখিয়ার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান বিচারের দাবীতে সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন করেও কোন কাজ হয়নি। ঘটনায় আহত প্রভাষক মোজাফফর
আহমদ দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ১৮/২০ দিনের ঘটনার পরেও পুলিশ একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এতে প্রতিয়মান হয় যেখানে একজন প্রভাষকের উপর হামলা,
মারধরের ঘটনার কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি, সেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন
দেখা দিয়েছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সনজুর মোরশেদ জানান, তারা এখনো অপরাধ
প্রবণতা দমনে সক্রিয় হতে পারেনি। যেহেতু পথঘাট অচেনা, যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের
সনাক্ত করা, সোর্স নিয়োগ প্রভৃতি বিষয়ে এখনো সঠিক পথে এগোতে পারিনি বলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুলিশ অপরাধ দমনে ও ইয়াবা প্রতিরোধে
সচেষ্ট আছে।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র আলী হায়দার আজাদ আহমদ বলেন, ইয়াবা পাচার আগের মতোই
আছে। কারণ সীমান্তে বিজিবি’র নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু ইতিমধ্যে মিয়ানমার
সেদেশের সীমান্তে তাদের অতিরিক্ত বিজিপি মোতায়েন করায় সীমান্ত এলাকায় সীমান্তরক্ষী
বাহিনীর পর্যবেক্ষণ ও টহল জোরদার রয়েছে।
পাঠকের মতামত: