কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

এক কাপড়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা এখন কোটিপতি

মিয়ানমার থেকে এক কাপড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখন কোটিপতি। এনজিওতে চাকরি, ইয়াবা, অস্ত্র ও স্বর্ণের কারবার করে কোটিপতির তালিকায় নাম উঠেছে আশ্রিত বহু রোহিঙ্গার। এজন্য কাউকে পরোয়া করছে না তারা।
সূত্র জানায়, মিয়ানমারে থাকাকালে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের খুবই সমীহ করত। কয়েকদিন থাকার শর্তে একটি বারের জন্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে কাকুতি জানাত রোহিঙ্গারা। ঈদ-উল-ফিতর ও কোরবানি ঈদের আগে প্রায় সময় রোহিঙ্গারা সাহায্যের জন্য বাংলাদেশে চলে আসত। চোরাই পথে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে জাকাত-ফিতরার জন্য হাত বাড়াত ধনাঢ্যশালীদের কাছে। সেই রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে তিন বছরের মধ্যে কোটিপতি বনে গেছে। যেন আলাদিনের চেরাগ খুঁজে পেয়েছে এই জনগোষ্ঠীর অনেকে। তাদের কাছে এখন লাখ লাখ টাকা জমা। আছে স্বর্ণের বার ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র। কারবার করছে লাখ লাখ পিস ইয়াবার। ক্যাম্প অভ্যন্তরে মার্কেট খুলে নিজেরাই দোকানি সেজে বিকিকিনি করছে। বনবিভাগের জায়গা দখলে নিয়ে ওইসব বনভূমিতে দোকানপাট গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর আশ্রয় শিবিরগুলো যেন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়ে পড়ে। এ কারণে স্থানীয়দের তো দূরের কথা, এখন রোহিঙ্গারা প্রশাসনের কথাও ঠিকমতো শুনতে চাইছে না।

সূত্র আরও জানায়, শরণার্থী আইনানুসারে উদ্বাস্তুরা আশ্রয় শিবিরে সীমাবদ্ধ থাকবে। বাইরে কোথাও যেতে হলে ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকান-মার্কেট খুলে ব্যবসা দূরের কথা, আশ্রিত দেশের মুদ্রাও রাখতে পারে না শরণার্থী-উদ্বাস্তুরা। আশ্রিত দেশের সরকার ও সেবা প্রদানকারী এনজিওগুলো দেখভাল করবে তাদের। এনজিও, কারখানা বা কোম্পানিতে কোথাও চাকরি করতে পারে না উদ্বাস্তুরা। আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র যাওয়া-আসা করছে। চালিয়ে যাচ্ছে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের কারবার। হাজার হাজার রোহিঙ্গা মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরি করছে বিভিন্ন এনজিওতে। তারা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা এনজিওতে চাকরি পাচ্ছেন না অথচ অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা চাকরি করছে বিভিন্ন এনজিওতে। এই সুযোগে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের জন্য সঠিক কোন আইন না থাকায় তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া যায় না বলে এতে চরম অসহায় হয়ে পড়ছে খোদ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ক্যাম্প ত্যাগ করে অন্য ক্যাম্পে যাওয়ার প্রাক্কালে অনুমতি নিতে বললে রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি উল্টো তেড়ে আসে।

রোহিঙ্গারা ইয়াবা বিক্রি করে বন্দুক কিনে নিয়ে আসছে আশ্রয় শিবিরে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে দুইটি অস্ত্রসহ ইয়াবা কারবারি সন্ত্রাসী ৩ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোহিঙ্গারা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এলেও তারা ক্যাম্পে অস্ত্র মজুদ করার পেছনে ভাবিয়ে তুলেছে ওয়াকিবহাল মহলকে। উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হলে অন্তত সহস্রাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা যাবে বলে ধারণা করেছেন এলাকাবাসী।

টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, আমি এখানে চাকরি করতে এসে দেখা প্রথমত রোহিঙ্গাদের আচার-আচরণ আর বর্তমান অবস্থার মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। তারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে সেটা মানতেই হবে। এই ক্যাম্পে আগে নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা থাকত। ২০১৭ সালে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আসায় ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে লুকিয়ে থাকে সন্ত্রাসী সশস্ত্র রোহিঙ্গারা। তাদের ধরার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু সন্ত্রাসী-ডাকাত ইতোমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছে। ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত ছোটখাটো কিছু সমস্যা লেগেই থাকে। যেমন গত সপ্তাহে এক রোহিঙ্গা যুবক সরকারী কাজে নিয়োজিত স্থানীয় শ্রমিকদের মারধর করেছে। ওই রোহিঙ্গা যুবক ঠিকাদারকে বাধ্য করেছে তার অধীনে কিছু লেবার নিতে হবে। যাদের তার ইচ্ছামতো বেতন-ভাতা দেবে। পরে তাকে ডেকে পাঠালেও সে আর অফিসে আসেনি। বাইরে থেকে অনেক সমস্যা তৈরি করছে।

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এপিবিএনের সদস্য রাসেল জানান, আমরা এখানে অনেক দিন ধরে কাজ করছি, প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের আচরণ আর বর্তমান আচরণের মধ্যে অনেক পার্থক্য। তারা এখন কাউকে মানতে চায় না। প্রথম দিকে আমরা কিছু বললে সেটা তাৎক্ষণিক শুনত বা পালন করত। এখন কেউ কথা শোনে না বরং তারা অল্প কথাতেই রেগে যায় যখন তখন মেজাজ দেখায়। আবার সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝগড়াও করতে তেড়ে আসে। এমনকি অস্ত্র দেখালেও ভয় পায় না রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের হাতে এখন নগদ টাকার অভাব নেই। তাই তারা বেশি বেপরোয়া হয়ে গেছে।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী একজন আর্মড পুলিশ সদস্য জানান, মাঝে মধ্যে মনে হয় রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয়ের জন্য নয়, লাভবান হওয়ার জন্য এসেছে। তারা এখন আশ্রিত নয় বরং আমাদের উপর শাসন করতে এসেছে। এদের নিয়ে ভবিষ্যতে বিপদ হতে পারে। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যাম্পেই জেলখানাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যে কোন ছোট বড় অপরাধের জন্য তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আবার কিছু এনজিও কর্মকর্তা আছেন, তারা সব সময় রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকেন। তাদের কার্যক্রমে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা দরকার হয়ে পড়েছে। হুমায়রা নামে স্থানীয় এক এনজিও কর্মী জানান, আমাদের সঙ্গে ১০-১৫ রোহিঙ্গা নারী এনজিওতে কাজ করে। সেখানে নানান কাজে রোহিঙ্গা মেয়েরা উল্টো আমাদের শাসাতে চায়। কাজে ছোটখাটো কোন সমস্যা হলে ফোন করে তাদের পুরুষ রোহিঙ্গা মাঝিদের ডেকে নিয়ে আসে এবং আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করে। রোহিঙ্গারা কথায় কথায় বলে তাদের কারণে আমরা চাকরি পেয়েছি। তাই তাদের সঙ্গে বেশি বাড়াবাড়ি করলে সমস্যায় পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কাছে বা এনজিও কর্মকর্তাদের কাছে বিচার দিলেও তারা কিছুই করে না। তাই রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

পাঠকের মতামত: