কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাসহ একদিনে ৩ খুন

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও পেকুয়ায় পৃথক ঘটনায় একদিনে তিনজন খুন হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক নারীসহ একজন রোহিঙ্গাও রয়েছেন। রোববার (১০ জানুয়ারি) ভোর রাতে গোলাগুলি ও পিটুনিতে খুন হন তারা। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

নিহতদের মধ্যে টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পে রোহিঙ্গা দু’গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত হন নুর হাকিম (২৭)। তিনি ২১ নম্বর ক্যাম্পের সি-ব্লকের বাসিন্দা হোসেন আলীর ছেলে। উখিয়ায় গলাকেটে খুন করা হয় দোকান কর্মচারী ফোরকান আহমদ ওরফে কালুকে (২২)। তিনি রত্নাপাং ইউনিয়নের তেলিপাড়া এলাকার বশির আহমদের ছেলে এবং পিটিয়ে হত্যার শিকার পারভিন আক্তার (৩৫)। তিনি পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের গুদারপাড়া এলাকার মো. কায়েস উদ্দিনের স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার ভোর রাতে উখিয়ার হাকিমপাড়া ও জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী টেকনাফের চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবিরের সি ব্লকে যায়। সেখানে তাদের সঙ্গে তোহা বাহিনীর ৫০-৬০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নুর হাকিম। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ১৫ জন। তাদের সেভ দ্য চিলড্রেনের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরে আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

টেকনাফ চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ (সিআইসি) সাধনা ত্রিপুরা জানান, শিবিরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। কি বিষয়ে ও কি ঘটেছে জানার চেষ্টা চলছে।

অপরদিকে, রোহিঙ্গা যুবকের হাতে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন কক্সবাজারের উখিয়ায় দোকান কর্মচারী ফোরকান আহমদ ওরফে কালু। এতে দোকানের টাকা লুট করে পালিয়ে যায় হত্যাকারী রোহিঙ্গা কর্মচারী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ দোকান মালিক শাহ আলমকে থানায় নিয়ে গেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উখিয়ার কোটবাজার দক্ষিণ স্টেশনের স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহ আলমের মালিকানাধীন একটি ডেকোরেশনের দোকানে স্থানীয় ফোরকান আহমদ ও এক রোহিঙ্গা কর্মচারী কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো তারা ঘটনার দিনও একসঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু রোববার (১০ জানুয়ারি) ভোররাতের কোনো একসময় ফোরকান আহমদ ওরফে কালুকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় ওই রোহিঙ্গা কর্মচারী। এ সময় দোকানে থাকা নগদ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ উদ্ধার করেছে।

উখিয়া থানার ওসি আহমদ সনজুর মোরশেদ জানান, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে টাকার লোভে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

একইদিন কক্সবাজারের পেকুয়ায় পারভিন আক্তার (৩৫) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৯ সালে চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়নের তানজুক কাটা এলাকার কবির আহমদের মেয়ে পারভিন আক্তারের সঙ্গে উজানটিয়া ইউনিয়নের গুদারপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে কায়েস উদ্দিনের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

নিহতের বাবা কবির আহমদ ও বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগ, জামাই কায়েস উদ্দিন জুয়াড়ি ও নেশাগ্রস্ত ছিলেন। জুয়া খেলা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। একইসঙ্গে যৌতুকের জন্য প্রায় সময় মারধর করতেন কায়েস। রাতে কায়েস, তার ভাই আনোয়ার হোসেন ও শাশুড়ি মাহফুজা বেগম মিলে পারভিনের ওপর বর্বর নির্যাতন চালান। খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাগোনিউজ২৪

পাঠকের মতামত: