কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৩৪৭ সদস্য বদলি

কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় ইমেজ সংকটে পড়া পুলিশবাহিনী ঢেলে সাজাতে ব্যাপক রদবদল শুরু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪৭ জনকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আট শীর্ষ কর্মকর্তা, ১৩৯ উপপরিদর্শক (এসআই), ৯২ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ১ হাজার ৫৫ জন নায়েব ও কনস্টেবল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ডিবি ও থানাসহ সব পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা ৩৪ পরিদর্শককে বদলি করা হয়। আজ সে সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বদলি হওয়া শূন্য পদ পূরণে আজই চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যোগ দিচ্ছেন ৫৩ জন পুলিশ পরিদর্শক, ৮৫ জন এসআই-এএসআই ও ৭৩৪ জন কনস্টেবল। এর মধ্যে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে পুলিশ সুপার (এসপি) এবি এম মাসুদ হোসেনকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসাবে বদলি করা হয়। আর ঝিনাইদহের এসপি হাসানুজ্জামানকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি গত বুধবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার এসপি মাসুদ হোসেন কক্সবাজার থেকে বিদায় নেন।

কক্সবাজার জেলায় পদায়নের জন্য যেসব পুলিশ সদস্যদের চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম অডিটোরিয়ামে আইজিপি তাদের ব্রিফ করেন। কীভাবে সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বপালন করতে হবে এ ব্যাপারে আইজিপি তাদের দিকনির্দেশনা দেন। মরণনেশা ইয়াবার বিরুদ্ধে জোরাল ভূমিকা পালন করতেও তাদের নির্দেশ দেন আইজিপি। ইয়াবা বিকিকিনির সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িয়ে পড়লে তার পরিণতি কী হতে পারে এ বার্তাও দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অনেক পুরনো। এ কারণে কক্সবাজারে বদলি হয়ে আসা কিছু পুলিশ সদস্যের জন্য লোভনীয় পদায়ন। সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর পর শেষ পর্যন্ত সদর দপ্তর থেকে পুলিশের এ কাজের লাগাম টানা শুরু হয়। প্রথম বদলি হন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রধান পরিদর্শক লিয়াকত আলী। সিনহার বোনের মামলার পর বদলি হন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। এর পরপরই বদলি হন কক্সবাজার সদর থানার ওসি আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির।

গত ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদের সাত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। এর মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বদলি হওয়ার পর টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে আসা নতুন ওসি মো. আবুল ফয়সলকে ১১ দিনের মাথায় বদলি করা হয়। টেকনাফে ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের অর্থের লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাকে বদলি করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার অঞ্চলের সব পুলিশ সদস্যকেই বদলি করা হবে। এটি নিয়মিত বদলিরই অংশ। পুলিশের ডিআইজি নিয়মিত বদলি বললেও সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মূলত কক্সবাজার জেলা পুলিশের এ শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়।

গত বুধবার রাতে বদলি হওয়া আদেশ অনুযায়ী উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আখতারকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর থানার ওসি মাসুম খানকে খুলনা রেঞ্জে, কুতুবদিয়া থানার ওসি একেএম সফিকুল আলম চৌধুরীকে খুলনা রেঞ্জে, মহেশখালী থানার ওসি দিদারুল ফেরদৌসকে বরিশাল রেঞ্জে, রামু থানার ওসি আবুল খায়েরকে রাজশাহী রেঞ্জে, চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানকে খুলনা রেঞ্জে, পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল আজমকে রংপুর রেঞ্জে এবং টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহাকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এভাবে অন্য সব পরিদর্শককে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে, ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যার পর চট্টগ্রাম মহানগরের সব পুলিশ সদস্যকে একযোগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে বদলি করা হয়েছিল। ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট ফটিকছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে জামাল উদ্দিন চৌধুরীর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।

পাঠকের মতামত: