কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার শহরে রাত হলেই প্রকাশ্যে আসে হোটেল জোনের অপরাধী চক্র

মাহাবুবুর রহমান::

কক্সবাজার শহরের এন্ডারশন রোড়ের বাসিন্দা ইব্রাহিম জানান,গেল বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে আমাদের পারিবারিক কিছু মেহমান আসায় হোটেল বীচওয়ে তে রাতে তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম স্বপরিবারে। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়াতে কথা বলতে বলতে রাত ১২ টার পরে আমরা একটি টমটম নিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিয়েছি। আমরা আসার পথে হোটেল মিডিয়ার কাছে আসতেই একটি মটরসাইকেল নিয়ে এক যুবক আমাদের ফলো করা শুরু করে পরে লাবনী মোড়ে এসে দেখি তার সাথে আরো ২টি মটর সাইকেল নিয়ে আমাদের পিছু নিয়েছে। মটর সাইকেলে থাকা ছেলেরা বার বার আমাদের টমটমের ভেতরে কতজন আছে ভাল করে খেয়াল করছিল এবং পরের জনদের বলছিল। আমরা ধরে নিয়েছি আজকে ছিনতাইয়ের শিকার হবো। সে জন্য মনে মনে অনেক ভয় পেয়েছি পরে আনছার ভিডিপি অফিস পার হলে তিনটি মটর সাইকেল আমাদের ভাল করে দেখে তারা বাহারছড়া দিয়ে ঢুকে পড়ে আর আমরা হলিডে মোড় হয়ে বাড়ি চলে আসি। পরে টমটম চালক আমাদের বলেন,এরা ছিনতাইকারী, যদি আমরা ভেতরের রোড় দিয়ে আসতাম তাহলে নিশ্চিত বিপদে পড়তাম। শহরের ঘোনার পাড়া এলাকার দেবাশীষ নামের একজন জানান,গত পরশু সাতকানিয়া থেকে আমার বাবার বাড়ির বেশ কয়েকজন আত্বীয় এসেছে বেড়াতে। তারা মোহাম্মদীয় গেষ্ট হাউজের পাশের গলিতে একটি হোটেলে উঠেছিল। আমার স্ত্রী সহ তাদের সাথে দেখা স্বাক্ষাত করেতে গেলে সেই গলির ভেতরে আরেকটি ছোট গলিতে নাস্তা খেতে গেলে সেখানে দেখা যায় বেশ কয়েকজন স্থানীয় বখাটে বসে সিগারেট খাচ্ছে।

যেহেতু আমাদের সাথে অনেক মহিলা তাই সিগারেটের গন্ধের কারনে কিছুটা বিরক্ত হওয়াতে আমি সেই ছেলেদের বারন করলে তারা উল্টো আমার সাথে ঝগড়া করতে আসে। এক পর্যায়ে তাদের সাথে আরো বেশ কয়েকজন ছোট ছোট ছেলে যোগ দিয়ে আমাদের হেনস্ত করেছে।

এ সময় অনেকে আমাদের বলেছে এদের সাথে আর বাড়াবাড়ি না করতে কারন তারা অল্প কথাতেই মানুষকে ছুরি মারতে দিধা করেনা। পরে আমরা ভয়ে কোন মতে চলে আসি। তিনি বলেন,হোটেল মোটেল জোনের ভেতরের গলি গুলোতে যে সব ঝুপড়ি দোকান,খাবারের হোটেল আছে সেখানে বসে বেশির ভাগ অপরাধীরা। তাই সে সব জায়গায় অভিযান জোরদার করার আহবান জানান তিনি। হোটেল জোন এলাকার ব্যবসায়ি শহিদুল ইসলাম বলেন,এখন পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে একই সাথে ছিনতাইকারী এবং অপরাধীদের ব্যাপক দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মাঝ রাত থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত অন্তত ১০/১২ টি গ্রæপ এখানে টহল দেয়,আর প্রত্যেকের কাছে মটর সাইকেল থাকে।

কিছু পর্যটক আছে তারা রাতে হোটেল থেকে বের হয়ে সাগর দেখতে যায়। আবার অনেকে রাতের বেলায় হাটতে বের হয়,অথবা ঔষধ সহ নানান প্রয়োজনে বের হয় ছিনতাইকারীরা তাদের টার্গেট করে সুযোগ পেলেই সে সব পর্যটকের সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। আবার কিছু পর্যটক আছে তারা রাতে বের হয়ে নিজেরা বিভিন্ন উপকর্ম করে সে জন্য সে সব পর্যটকদের সাথে কিছু স্থানীয় মাদক পাচারকারী জুটে যায় পরে সকাল বেলা খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে সব পর্যটকও সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। নাছির উদ্দিন নামের এক সিএনজি চালকের সাথে কথা বললে তিনি জানান,হোটেল মোটেল জোন হচ্ছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এখানে হয়না এমন অপরাধ খুব কম আছে। নারী ব্যবসা থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা সব কিছু চলে এখানে তাই একটু রাত হলেই সব অপরাধীদের আনাগুনা বেড়ে যায়। তিনি জানান প্রত্যেক ছিনতাইকারী বা অপরাধীদের পক্ষে থাকে স্থানীয় বেশ কিছু নেতা। এখানে যারা ছিনতাই,নারী,মাদক ব্যবসা করে তারা কয়েকজন নেতার আন্ডারে কাজ করে ফলে তাদের কেউ কিছু বলেনা। এ ব্যপারে টুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মহিউদ্দিন আহামেদ বলেন,হোটেল মোটেল জোনে অপরাধীরা আগের মত সক্রিয় নাই। তাই এখানে আগের মত ঢালাও ভাবে অপরাধ করে কেউ পার পায় না। তবে মৌসুম শুরু হওয়াতে হয়তো অনেক অপরাধী সেই সুযোগ দিতে পারে তাই আমাদের টিম সব সময় কাজ করছে। তবে সমস্যা হচ্ছে পর্যটকরা কোন অসুবিধার সম্মুখিন হলে আমাদের জানায় না পরে গিয়ে ফেইসবুকে লিখে এখন আমরা ফেইসবুকের সূত্র ধরেও অপরাধ নিয়ন্ত্রনের কাজ করছি।

পাঠকের মতামত: