কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে তিন ইপিজেডে ১২৭ কারখানা চালু, স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি মধ্যে চট্টগ্রামের তিনটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ১২৭টি কারখানা চালু হয়েছে।

তবে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালুর কথা বললেও ভেতরে এর কোনো বালাই নেই বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা।

তারা জানিয়েছেন, শুধু কারখানায় ঢোকার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু কাজের সময় ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখা হচ্ছে না।

কারখানাগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনে কাজ করলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন জেলার সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দুটি ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা করেই কারখানাগুলো খোলা হয়েছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজার অধীন চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেড রয়েছে এর মধ্যে। এর বাইরে আনোয়ারায় আছে ইয়ংওয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন কোরিয়ান ইপিজেড।

রোববার তিন ইপিজেড মিলিয়ে ১২৭টি কারখানা চালু হয়েছে। সীমিত পরিসরে কম শ্রমিক নিয়ে এসব কারখানা তাদের কার্যাদেশ টিকিয়ে রাখার জন্য খুলেছে বলে সংশ্লিষ্ট ইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডে তৈরি পোশাক, তাঁবু, ইলেক্ট্রনিক্স, ফেব্রিক্স, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানা রয়েছে ১৫৮টি এবং এখানে শ্রমিক সংখ্যা দুই লাখের মতো। কর্ণফুলী ইপিজেডে ৪১টি কারখানার শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৭৬ হাজার। অপরদিকে আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেডে ২২টি কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম রোববার বলেন, তাদের ৭৫টি কারখানা চালু হয়েছে সীমিত পরিসরে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ শুরু করেছে।

রোববার ইপিজেডে ৪৫ হাজারের মতো শ্রমিক এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড থেকে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে কর্ণফুলী ইপিজেডের ৪১টির মধ্যে ৩০টি কারখানা আংশিকভাবে চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ।

এছাড়া আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান জানিয়েছেন, তাদের সব করাখানা খুলেছে। তবে শ্রমিক উপস্থিতি ৪০ শতাংশের মতো। তাদের কাজও হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে।
কিন্তু শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। তারা জানিয়েছেন, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ, আবার কোনো কোনো কারখানায় তারও বেশি শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না কারখানার ভেতরে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডে কোরিয়ান মালিকানাধীন কারখানার এক শ্রমিক জানান, বেপজা ও বিজিএমইএর নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতিতে কারখানা চালু রাখার কথা বলা হলেও তা মানা হয়নি।

কারখানায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “রোজায় সকাল সাতটা থেকে কারখানা চালু হয়। তবে রোববার বেলা ১০টায়ও অনেক শ্রমিক কাজে এসেছেন।”

অনেক শ্রমকিকে ফোন করে বাসা থেকে ডেকে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ এই শ্রমিকের।

বাংলাদেশি মালিকানাধীন দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার একাধিক শ্রমিক বলেছেন, গত ১৫ এপ্রিল থেকে তাদের প্রতিষ্ঠান লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেজন্য অনেকে বেতন পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত ছিল। তবে রোববার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে তাদের।

একাধিক কারখানার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, স্বল্প পরিসরে কাজ চালানোর জন্য ইপিজেড এলাকার আশপাশের শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি হয়ে যায়।

আবার অনেকে ‘চাকরি বাঁচাতে’ দূর-দূরান্ত থেকেও এসেছেন। তবে তাদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেয়া হয়নি।

একইভাবে বিদেশি মালিকানাধীন কয়েকটি কারখানার শ্রমিক-কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ১৫ এপ্রিল থেকে লে-অফ ঘোষণা করা হলেও ছুটিতে স্বল্প পরিসরে কাজ হয়েছিল। অল্প সংখ্যক শ্রমিক আর কর্মকর্তা প্রতিদিন অফিস করেছিলেন। তবে রোববার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে বলে তারা জানান।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এপ্রিল মাসের শুরুর পর চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেডের ৬৯টি কারখানা লে- অফে যাওয়ার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ইপিজেডগুলো বরাবর আবেদন করেছিল।

শ্রমিকরা জানান, প্রতিষ্ঠান লে-অফ ঘোষণা করায় তিন ভাগের এক ভাগ বেতন পেতেন তারা। যে টাকা দিয়ে নিজের এবং পরিবার চালানো দায়। সে অবস্থা থেকে মুক্ত হতেই তারা মূলত কাজে যোগ দিয়েছেস।
আমান বাজার থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেড আসা একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হলেও কারখানা চালু রাখায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সেটি মানতে পারেননি শ্রমিকরা।

রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। একটি ছাতায় দুইজনও চালাচল করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভোর সাড়ে পাঁচটায় বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা করে আক্সিজেন মোড় এসেছি। সেখান থেকে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে করে টাইগার পাস, সেখান থেকে আবার বৃষ্টি মাথায় পায়ে হেঁটে, রিকশা নিয়ে ইপিজেড পোঁছাতে সোয়া আটটা বেজে যায়।”

কারখানার ভেতরেও শুধু হাত ধোয়া ও মাস্ক পড়ার ব্যবস্থা করা হলেও সামাজিক দূরত্বর কোনো বালাই ছিল না বলে অভিযোগ ওই কর্মকর্তার।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম বলেন, “সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না এমন অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়ে দেয়া হয়েছে কারখানা মালিকদেরকে।

“আমাদের পক্ষ থেকে কারখানা পরিদর্শন করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে। যেসব ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখেছি তা নিরসনের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”

এছাড়া এসব মনিটরিং করার জন্য চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কাজ করছে দাবি করে সেখানকার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, “হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া, কারখানার ভেতর সামাজিক দূরত্ব ঠিকমতো মানা হচ্ছে।”

তাদের অধিকাংশ শ্রমিকই আনোয়ারা এলাকার আশপাশের হওয়ায় আনা-নেয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

কারখানাগুলোতে কাজ করার সময় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মানলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বেই বলে মনে করেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী।

তিনি বলেন, “কারখানা সীমিত পর্যায়ে খুলছে। সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তা না হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়তে থাকবে।”

পাঠকের মতামত: