কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেকে গ্রেফতারের খবরে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মায়ের মৃত্যু!

বিশেষ প্রতিবেদক::

কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি এলাকায় ফের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় কমপক্ষকে ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় গ্রামবাসীরা গুরুত্বর অবস্থায় উদ্ধার করে উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি জামে মসজিদের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। সংঘর্ষে ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটককৃতদের মধ্যে নিয়মিত মামলার আসামী আলী হোছনের ছেলে আহমেদ শরীফ। সংঘর্ষ চলাকালে আটক করা হয় ইসলাম মিয়ার ছেলে জাফর আলম (৪৮), আলী আহমদের ছেলে মমতাজ মিয়া, মৌলভী ইসলামের ছেলে সিরাজ উল্লাহ (২৮), বদিউল আলমের ছেলে হাকিম আলী। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় বলে জানা গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার জালিয়াপালং পশ্চিম সোনাইছড়ি এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা গত কয়েকদিন পূর্বে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় এনজিও কর্মী দেলোয়ার হোসেনসহ ৩ জনকে গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে একজন আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ওই ঘটনায় উখিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলা নম্বর ৪৫, তারিখ ৩১/৩/২০২০, ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৫০৬/৩৪। উক্ত মামলায় তালিকা ভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করতে শুক্রবার বিকালে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে আহমদ শরীফকে আটক করে।

এদিকে আসামী আটক পরবর্তীতে উখিয়ার সোনাইছড়ি গ্রামের ইসলাম মিয়ার ছেলে শামসুল আলম সোহাগ ও বজল আহমদের পুত্র সানা উল্লাহ সহ একদল সন্ত্রাসীরা বাদীপক্ষের উপর হামলা চালায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় এবং পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।

আহতরা হলো, সোনাইছড়ি গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে আবদুস কুদ্দুস (৪৫), আমির হোসেনের ছেলে ফরিদুল আলম (৪৭ হোসেন (২৫), মোঃ রনি (২১), মোহাম্মদ রাসেল (২২), সানা উল্লাহ (৪০), তার ভাই ও জাফর আলম। বাকীদের পরিচয় তাৎক্ষনিক পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সাথে জড়িত জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের আলী হোসেনের স্ত্রী নুর নাহার বেগম তাঁর ছেলে আহমেদ শরীফকে আটকের খবর পেয়ে মা (স্ট্রোক) হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ সাহা বলেন, নিয়মিত মামলার এক আসামী করা হয়। পরে দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে আরো ৪জনকে আটক করা হয়। তিনি আরো জানায়, ছেলে আটকের খবর পেয়ে আহমেদ শরীফের মায়ের হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিষয়টি মানবিক বিবেচনার জন্য তাৎক্ষনিক জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী মারামারির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আলী হোসেনের স্ত্রী নুর নাহারকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে মহিলাটি কেন মারা গেছে তা আমি জানি না।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডাঃ মেরাজ হোসেন চয়ন বলেন, মৃত অবস্থায় রোগী কোটবাজার অরিজিন হাসপাতালে আসেন। লাশের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি এবং হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগির মৃত্যু হয় বলে ধারনা করেন।

এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ছেলে আটকের খবর পেয়ে মায়ের মুত্যুর বিষয়টি দু:খজনক। আসামীপক্ষের কেউ আসলে মানবিক দিক বিবেচনা করে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়ার আলোচনা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: