কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল

মায়ের আগে মেয়ের জন্ম!

মায়ের জন্মের ২ বছর ৮ মাস ৬ দিন আগে মেয়ের জন্ম হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও এমন ঘটনা ঘটেছে বরিশালে। তবে বাস্তবে নয়, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের চেয়েও বেশি বয়স দেওয়া হয়েছে মেয়ে সুমী তালুকদারের। এ কারণে ৩৪ বছর বয়সেই তাকে অবসরে যেতে বলছে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বরিশালের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অকালে চাকরি থেকে অবসর নিতে হবে এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে তার। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ওই পরিবার। জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখ করা ‘ভুল’ বয়স সংশোধনের জন্য তার স্বামী নগরীর বরফকল বস্তির কবির তালুকদার একাধিকবার উপজেলা নির্বাচন অফিস, এমনকি নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেও কোনো ফল পায়নি।

নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সেবা ক্লিনিক গলির বাসিন্দা মৃত আবুল সিকদারের মেয়ে সুমী আক্তাররের বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালে।

তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। এখন তার দুই ছেলে-এক মেয়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৯৬২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। সে অনুযায়ী এখন তার বয়স প্রায় ৫৯ বছর ১ মাস ২২ দিন।
অথচ তার মা মাকসুদা বেগমের জন্ম তারিখ ১৯৬৫ সালের ১৫ জুলাই। সে অনুযায়ী সুমীর মায়ের বয়স ৫৬ বছর ৩ মাস ২৮ দিন। অর্থাৎ মায়ের চেয়ে মেয়ের বয়স ২ বছর ৮ মাস ৬ দিন বেশি।
সুমী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র করার ক্ষেত্রে তিনি নিজে কোনো ভুল করেননি। তখন জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে ভোটার হন তিনি।

জন্ম নিবন্ধনে তার জন্ম তারিখ ছিল ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি জীবনে প্রথম ভোটর হন ২০০৭ সালে ২৪ বছর বয়সে।
সুমী বলেন, ২০০৩ সালে তিনি নগরীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের আয়া পদে চাকরি নেন। সেখানে ১৯ বছর চাকরির বয়স হতেই জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স বেশি উল্লেখ থাকায় আগামী ৬ মাস পর তাকে অবসরে যেতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। যৌবন বয়সে অবসরে গেলে আর্থিক অনটনে পড়বে পরিবার।

সুমীর স্বামী কবির তালুকদার, স্ত্রীর ‘ভুল’ বয়স সংশোধনের জন্য একাধিকবার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ধর্না দেন। তারা কোনো প্রতিকার না দিয়ে ‘সার্ভারে সমস্যা, স্যার নেই’ সহ নানা অজুহাতে প্রতিদিনই তাকে ফিরিয়ে দেন। এরপর স্থানীয় নির্বাচন অফিসের চাহিদা অনুযায়ী ১৩ ধরনের প্রমাণপত্র নিয়ে দেড় বছর আগে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে যান কবির-সুমী দম্পত্তি। সেখান থেকে এসএসসি সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। কবির বলেন, তার স্ত্রী অষ্টম শ্রেণি পাশ। সে এসএসসি সার্টিফিকেট পাবে কোথায়? তিনি তার স্ত্রীর বয়স সংশোধনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।

নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহিদুল্লাহ কবির বলেন, সুমী তালুকদারের প্রকৃত জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৮৩ সাল। কিন্তু ভুলক্রমে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সাল। এভাবে ভুলের জন্য অনেক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। এই ভুলের দায় নির্বাচন কমিশনের। স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য এই ভুল সংশোধন হওয়া একান্ত জরুরি।

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, মায়ের জন্মের আগে মেয়ের জন্ম তারিখ অযৌক্তিক। এমন ঘটনা তার নজরে এলে কিংবা কেউ আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে সেটা সংশোধন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তারা।

পাঠকের মতামত: