কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩৯৮ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৯ পথচারী নিহত

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৮টি দুর্ঘটনায় ৪০৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পুরুষ ২৪৬ জন, নারী ৬৬ জন এবং শিশু ৯৭ জন।

আজ সোমবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬১ দশমিক ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে এবং ৩৮ দশমিক ১৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে পথচারীদের অসতর্কতার কারণে।

ঢাকা বিভাগে ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ পথচারী নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ঢাকা মহানগরে সবচেয়ে বেশি পথচারী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

পথচারী নিহতের কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে জানানো হয়, চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, সড়কের সাইন, মার্কিং ও জেব্রা ক্রসিং চালক এবং পথচারীদের না মানার প্রবণতা, নগরীর যথাস্থানে সঠিকভাবে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ না করা এবং ব্যবহার উপযোগী না থাকা, বিদ্যমান ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের অনীহা, পথচারীদের বেখেয়ালি-অসর্তভাবে রাস্তায় হাঁটা ও রাস্তা পারাপারের অভ্যাস, রাস্তায় হাঁটা ও পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, গান শোনা ও চ্যাটিং করা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, প্রশিক্ষণহীনদের মোটরসাইকেল ও স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন চালানো, শিশু-কিশোরদের এলোমেলোভাবে রাস্তায় হাঁটাচলা করা, সড়ক ঘেঁষে বসতবাড়ি নির্মাণ এবং সড়কের ওপর হাট-বাজার গড়ে উঠা, জনসাধারণের মধ্যে সড়কে নিরাপদ চলাচল বিষয়ে জ্ঞান না থাকা এবং অবহেলার মানসিকতা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সুপারিশ, অদক্ষ চালক কর্তৃক যানবাহন চালনা বন্ধ করতে হবে, গণপরিবহন চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে, যানবাহন চালকদের নিয়মিত মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যথাস্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে তা ব্যবহারে পথচারীদের উৎসাহিত ও বাধ্য করতে হবে, ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ হকারদের দখলমুক্ত রাখতে হবে, কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা বন্ধে প্রচারণাসহ কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সড়কে নিরাপদ চলাচল বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোটিভেশনাল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে, শহরে-গ্রামে লোকসংগীত ও পথনাটকের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে মাঝে-মধ্যেই সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক ডকুমেন্টারি/শর্টফিল্ম প্রদর্শন এবং জনস্বার্থে দিনে ৪-৫ বার সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা হাট-বাজার বন্ধ করতে হবে, ট্রাফিক আইনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধিসমূহ মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। বাড়ছে নানা প্রকার অপরিকল্পিত যানবাহন। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষের যাতায়াত বাড়লেও সড়কে নিরাপদ চলাচল বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না। সরকার সড়ক-সেতু নির্মাণে ব্যাপক অর্থ খরচ করছে, কিন্তু সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অর্থ ব্যয় করছে না। ফলে কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহতের হার চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন মাসে থ্রি-হুইলার এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের চেয়ে দ্রুতগতির ভারী যানবাহন দ্বারা পথচারী বেশি নিহত হয়েছেন। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহতের ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে। রাস্তা পারাপারে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি নিহত হয়েছেন। বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়ক ঘেঁষা হাট-বাজারে এবং বসতবাড়ির সন্নিকটে। এই প্রতিবেদন তিন মাসের হলেও এটাই মূলত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহতের সামগ্রিক প্রকৃত চিত্র। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

পাঠকের মতামত: