কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ফের গোলাগুলি,স্থানীয়রা আতংকে!

টেকনাফের পাহাড় গুলো রোহিঙ্গা ডাকাতদের দখলে

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ::

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে আস্তানা করে লুকিয়ে থাকা অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়,

টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের অন্তর্গত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে গড়ে উঠেছে অস্ত্রধারী ডাকাত দলের ১০/১২টি সক্রিয় গ্রুপ। তারা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে নানা প্রকার অপরাধ কর্মকান্ড সৃষ্টি করে চালিয়ে যাচ্ছে রাম রাজত্ব! এই ডাকাত গ্রুপের মধ্যে আলোচিত গ্রুপ হচ্ছে,শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম বাহিনী, ডাকাত জকির বাহিনী,ডাকাত সালমান বাহিনী। এই ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা তাদের নিজেদের আদিপত্য জানান দিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর ভিতরে,বাহিরে এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে

মাদকপাচার,ডাকাতী,অপহরন,নারী ধর্ষনসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা সংঘটিত করছেনা। এমনকি এই ডাকাত দলের সদস্যরা ক্যাম্পে থাকা কম বয়সি নারী ও শিশুদের অপহরন করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার পর মুক্তিপন দাবী করে। টাকা না দিলে নির্মম ভাবে হত্যা করার পর ঘুম করে ফেলে। এদিকে এই অস্ত্রধারী ডাকাতদের বেপরোয়া কর্মকান্ড প্রতিরোধ এবং তালিকাভুক্ত শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাতদের নির্মুল করার জন্য টেকনাফ উপজেলায় দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্ট আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারেই ধারাবাহিকতায় গত ২ মার্চ ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘন্টা ব্যাপী র‍্যাব-১৫ সদস্যদের সাথে গোলাগুলিতে শীর্ষ জকির ডাকাতের ৭ সদস্য নিহত হয়। তবে ডাকাত দলের
মুলহোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় অত্র এলাকার সাধারন মানুষ ও অসহায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতংক। কারন শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত জকিরের ৭ সদস্য নিহত হওয়ার জের ধরে হ্নীলা জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ী এলাকায় আবারও গুলি বিনিময়ের ঘটনায় ঘটে।

তথ্য সুত্রে জানাযায়, ৩ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টার দিকে ডাকাত জকির গ্রুপ আবারও তাদের অপকর্ম অব্যাহত রাখার জন্য এবং স্থানীয় লোকজন ও সাধারন রোহিঙ্গাদের মনে আতংক সৃষ্টি করতে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানাযায়,
শীর্ষ ডাকাত জকিরসহ অস্ত্রধারী ডাকাত দলের সদস্যরা জাদীমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ডাকাতদের আস্তানা খ্যাত এডরা নামক পাহাড়ে অবস্থান করে। এরপর সেখান থেকে নেমে র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি সংঘটিত হওয়ার ঘটনাস্থলে এসে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। তাদের বেপরোয়া গুলিবর্ষনে পার্শ্ববর্তী লোকজন ও ক্যাম্পে থাকা সাধারন রোহিঙ্গাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। এদিকে গতকাল থেকে হ্নীলা জাদীমুড়া,নোয়াপাড়া,শালবাগান অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর মধ্যে মানুষের আনাঘোনা আগের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা অভিমত প্রকাশ করে বলেন নিজ জন্মভুমি মিয়ানমার রাখাইন সেনাদের নির্মম বর্বরতা সর্য্য করতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার ও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সহযোগীতায় খুব আরামেই দিন কাটাচ্ছি।

অথচ কিছু অসাধু এবং অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একের পর এক বেপরোয়া গোলাগুলি, মাদকপাচার, ডাকাতি,খুন অপহরন,ধর্ষনসহ নানা প্রকার অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত করার করার কারনে ভয়ে আর আতংকের মধ্য বসবাস করছি।
তারা আরো বলেন,রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা শীর্ষ ডাকাত দলের মুলহোতারা এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদেরকে আইনের আওয়তাই নিয়ে এসে নির্মুল করতে না পারলে অত্র এলাকার স্থানীয় জনগন ও সাধারন রোহিঙ্গারা ডাকাত দলের বেপরোয়া কর্মকান্ড থেকে রেহাই পাবেনা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে আবারও ডাকাত দলের ফাঁকা গুলি বর্ষনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে র‍্যাব-১৫ টেকনাফ (সিপিসি-১) ইনচার্জ মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত জকির গ্রুপের সদস্যরা ক্যাম্পে থাকা সাধারন রোহিঙ্গাদের মনে ভয়ভীতি পদর্শন করার জন্য পাহাড়ে গুলি বর্ষণ করেছে বলে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে শুনেছি। তিনি পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা ডাকাতদের নির্মুল করার জন্য র‌্যাবের চলমান যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।

পাঠকের মতামত: