কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

টেকনাফে গাছের পাতা নিমেষেই সাবাড় করে দিচ্ছে পোকা

টেকনাফে পোকার আক্রমনে একটি ভিটের বেশকটি গাছের কাঁচা পাতা নষ্ট হতে চলেছে। দেখতে অনেকটার পঙ্গপালের মত শত শত পোকা দল বেঁধে গাছের পাতা ও শাখায় বসে একের পর এক গাছের পাতা খেয়ে ফেলছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ভিটের মালিক টেকনাফের লম্বারী পাড়ার সোহেল সিকদার। তিনি বলেন, গত ১৮ এপ্রিল বিকেলে হঠাৎ করে আমার বাগানের কিছু গাছে পোকা দেখতে পায়। পোকাগুলো গাছের পাতা নিমেষেই শেষ করে দিচ্ছে। এই পোকা আগে কোনদিনও দেখিনি। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করি। এরপর গত ২২ এপ্রিল পোকাগুলো দেখতে ছুটে আসেন টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। পরে কৃষি কর্মকর্তা পোকাগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিপকর্ড কীটনাশক ব্যবহার করে মেরে ফেলে।

সোহেল সিকদার বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করার পর পোকা কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও পোকাগুলো বেড়ে গেছে। এখন ১৫টির মতো গাছে এ পোকা আক্রমণ করেছে। বিষয়টি আবারও কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল আলমকে জানানো হয়। এরপর তিনি বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে এসে আবারও কীটনাশক ব্যবহার করে মেরে ফেলেছেন। তবে এখন আর ওই পোকাগুলো দেখা যাচ্ছে না। আবারও যদি এই পোকা আক্রমণ করে এটা নিয়ে আতঙ্কে আছি।

টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, পোকার বিষয়টি জানার পর দ্রুত ওই বাড়িতে ছুটে যায়। দেখি কালো আকৃতির কিছু পোকা লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠছে এবং পাতা খেয়ে ফেলছে। পরবর্তীতে কীটনাশক ব্যবহার করে পোকাগুলো মেরে ফেলি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করি।

তিনি আরও বলেন, সোহেল সিকদার বাড়ির আশপাশের এলাকা খুবই নোংরা। পোকাগুলো প্রথমে কীটনাশক ছিটিয়ে মেরে ফেললেও অনেক পোকা থেকে যায়। যা পরবর্তীতে আবারও গাছে আক্রমণ করে। তারপর বিষয়টি জেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানানো পর তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

এরপর বৃহস্পতিবার আবারও ওই বাড়িতে গিয়ে প্রায় ৯৮ শতাংশ পোকা কীটনাশক ছিটিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছি। তবে এটি পঙ্গপাল নয়; পঙ্গপাল তো উড়তে পারে, পাখাও রয়েছে। কিন্তু এ পোকাতে কোন পাখা নেই এবং উড়তেও পারে না। এটি কালো আকৃতির পোকা।

কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম বলেন, টেকনাফের যে পোকাটি দেখা গেছে এটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপরও পোকাটি ভিডিও করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার বিজ্ঞানী বারী কাছে পাঠিয়েছিলাম। এইমাত্র তিনি ফোনে জানিয়েছেন, এটা মরুভূমির যে পঙ্গপাল সে পঙ্গপাল না। এটা ঘাস ফড়িংয়ের একটি প্রজাতি হতে পারে। তারপরও পোকাটির নমুনা বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই পোকা তো পাখা নেই উড়তে পারে না এবং পোকাটি ছোট, নরম ও ছোট ঘাস ফড়িং এর মতো। মরুভূমির যে পঙ্গপাল এটির আকার তো বড় চিংড়ি সমান। কিন্তু এটা তো কোনোভাবে ওই আকৃতির না।

মো. আবুল কাশেম বলেন, টেকনাফের এ পোকা নিয়ে যেভাবে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশে পঙ্গপাল ঢুকে গেছে আসলে বিষয়টা তা নয়। কারণ এই পোকা ফসল ধ্বংস করে না এবং ফসলের জমিতেও এ পোকার অস্থিত্বও পাওয়া যায়নি। সাহারা মরুভূমি, আফ্রিকা, পাকিস্তানসহ অন্যান্য স্থানে ভিডিওতে যে পঙ্গপাল দেখি এটা সাথে এই পোকার কোন মিলও নেই। সুতরাং পঙ্গপাল বলে আতঙ্কিত হবার কিছুই নেই।

পাঠকের মতামত: