কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ডিস-ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্তে আতংক!

মাটির নিচ দিয়ে তার সম্প্রসারণের সুযোগ না দিয়েই ঝুলন্ত তার কাটায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে ডিস ক্যাবল ও ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন। এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আতংক দেখা দিয়েছে সব মহলে।

তথ্যপ্রযুক্তি, ইকমার্সের মতো বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীসহ দুশ্চিন্তায় খোদ সরকারের দায়িত্বশীলরাও।

সম্প্রতি রাজধানী থেকে ডিস ক্যাবল ও ইন্টারনেট অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের ঝুলন্ত তার কাটা শুরু করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। মাটির নিচ দিয়ে তার সম্প্রসারণের সুযোগ করে না দিয়েই এমন তার কাটায় ক্ষুব্ধ ডিস ক্যাবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াব এবং ইন্টারনেট সংযোগ সেবা দেওয়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইএসপিএবি। এভাবে তার কাটার প্রতিবাদে রোববার (১৮ অক্টোবর) শুরু করে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার প্রতিবাদী কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সংগঠন দু’টি।

গেলো সোমবার (১২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন দু’টির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে আইএসপিএবি’র সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করেই এভাবে তার কাটায় ইতোমধ্যে আইএসপিএবি এবং কোয়াবের আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৩৩টি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক, এক লাখের বেশি চাকরিজীবী এবং এক হাজার আইএসপিএবি ও কোয়াব সদস্য চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন।

সংগঠনগুলোর এমন হুংকারেও অনড় অবস্থানে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আইএসপিএবি, কোয়াব ও এনটিটিএন অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে মাটির নিচ দিয়ে তার সম্প্রসারণ না হওয়া পর্যন্ত তার না কাটার একপ্রকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে তার অপসারণ এখনও অব্যাহত রেখেছে ডিএসসিসি।

এদিকে তার টানাটানির এমন বিশৃংখলার খেসারত চিন্তা করে আতংকিত হচ্ছেন ইন্টারনেট ও ক্যাবল সেবা গ্রহীতারাও। বাড়িতে থেকে ইন্টারনেটনির্ভর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছেন তারা।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার গৃহিণী সামসুন নাহার বলেন, সমন্বয়হীনতার এই বেড়াজালে বলির পাঠা হচ্ছি আমরা। মেয়ের ক্লাস, পরীক্ষা সব হচ্ছে ইন্টারনেটে। এরজন্য ব্রডব্যান্ড সংযোগই ভরসা। মোবাইল ইন্টারনেট সহজলভ্য না আবার নেটওয়ার্কের গতিও স্থির থাকে না। আবার নাকি ডিস বন্ধ থাকবে। আমরা গ্রাহকেরা অর্থ খরচ করেও সেবা পাবো না। উল্টো ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

ভোক্তা ছাড়াও ব্যবসায়ী খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আতংক দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম সানি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা এগোচ্ছি, এমন সিদ্ধান্ত সেই পথে একটা বড় বাধা। তবে তাদের এমন ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্তও যৌক্তিক। তার সম্প্রসারণের বিকল্প না করেই যদি তার কাটা হয় তাহলে তারাই বা কী করবে?

‘একটা সুপারশপের পজ (পয়েন্ট অব সেল) মেশিনও ইন্টারনেটে চলে। একদম তৃণমূল পর্যায়েও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ রাখছি যেন বিষয়টির একটা সুরাহা হয়। ’

ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে মনে বলে করছেন বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাক্য’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে আমাদের প্রচুর ক্ষতি হবে। আমরা সার্ভিস দিতে না পারলে বিদেশি গ্রাহকেরা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এটা তো আর সাবমেরিন ক্যাবলের সমস্যা না যে পুরো পৃথিবীজুড়ে হচ্ছে। বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে এই বার্তাই যাবে যে, এই দেশে সরকার আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনে এমনটা হচ্ছে।

তবে শনিবারের (১৭ অক্টোবর) মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। আলোচনায় সমাধান না এলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বেসরকারিখাতের পাশাপাশি সরকারিখাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর। বাংলানিউজকে মোস্তাফা জব্বার বলেন, কিছুক্ষণ আগেও আইএসপিএবির সঙ্গে আমি এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য কথা বলছিলাম। কিন্তু তারা জানালো দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গতকালও তাদের তার কেটেছে। এমন অবস্থায় তাদের পিঠ তো দেয়ালে ঠেকে গেছে। উত্তর আলোচনা করে একটা অবস্থায় এসেছে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের কথাও শোনে না। তাহলে এই ব্যবসায়ীরা আর কী করবে? আমরা সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা নিয়েও চিন্তিত আছি। ই-নথির মাধ্যমে ফাইল চালাচালি হয়। তাহলে সেখানেও তো সমস্যা হবে। ডিস সংযোগ বন্ধ থাকলে এতগুলো গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত সবার সঙ্গে কথা বলে যাবো। কোয়াব, আইএসপিএবিকে বলবো সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে আর কী কর্মসূচি নেওয়া যায়। বাকিটা দেখা যাক।

পাঠকের মতামত: