কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

তিন মাস ধরে শুধু নিরীক্ষাতেই ব্যস্ত ইভ্যালির নতুন পরিচালকরা

তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কেনা-বেচা এবং পণ্য সরবরাহের কাজ। ফলে আয়ের কোনো সংস্থান নেই। কিন্তু ব্যয় যথারীতি রয়েছে।

এসব ব্যয় মেটানোর জন্য রবিবার (১৬ জানুয়ারি) ইভ্যালির জব্দ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। খবর বিবিসি বাংলার।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট বেঞ্চ একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ইভ্যালি বোর্ড গঠন করে দিয়েছিলেন। তাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়, ইভ্যালির বর্তমান আর্থিক অবস্থার পর্যালোচনা করা, দায়-দেনা ও সম্পদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতের সামনে উপস্থাপন করা।

সেইসঙ্গে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত ও কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেটিও সুপারিশ করবে এই বোর্ড।

গত তিন মাসে এই পরিচালনা বোর্ড নয়টি সভা করেছে। কিন্তু তিন মাস পরেও ইভ্যালির মোট দেনা ও সম্পদের পরিপূর্ণ চিত্র পায়নি পরিচালনা কমিটি, জানান কমিটির সদস্যরা।

ব্যয় মেটাতে গাড়ি-কম্পিউটার বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত

গতকাল সন্ধ্যায় ইভ্যালি পরিচালনা কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা শেষে ব্যবস্থাপনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আজকেই আমরা হাইকোর্ট থেকে ইভ্যালির দুইটি ব্যাংকের হিসাবে থাকা দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করার অনুমতি পেয়েছি। তবে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের যে পাওনা রয়েছে, সেই তুলনায় এই টাকা নগণ্য।

রবিবার হাইকোর্ট সাউথইস্ট ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকে থাকা ইভ্যালির দুইটি হিসাব থেকে পরিচালনা কমিটিকে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করার অনুমতি দেয়।

এর বড় একটি অংশ নিরীক্ষকদের ফি, কোম্পানির বর্তমান ৩০ জন কর্মীর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য পরিচালনায় খরচ হতে পারে বলে শামসুদ্দিন চৌধুরী ধারণা করেন।

তিনি জানান, ইভ্যালির ২৫টি নানা ধরনের গাড়ির তথ্য পেয়েছেন। তার মধ্যে ১৪টি গাড়ি বর্তমান কমিটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বাকি গাড়িগুলোর খোঁজ মিলছে না। এর মধ্যে রেঞ্জরোভারের মতো উচ্চমূল্যের বিলাসবহুল গাড়িও রয়েছে।

এজন্য আমরা একটি মামলা করেছি। পুলিশ এসব গাড়ির খোঁজ করছে। আশা করছি, বাকি গাড়িগুলোও আমরা পেয়ে যাব, বলেন সাবেক বিচারপতি।

বিলাসবহুল গাড়িগুলো বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইভ্যালি পরিচালনা কমিটি। সেইসঙ্গে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, টেলিভিশনের মতো বেশ কিছু অতিরিক্ত অফিস সরঞ্জামও বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পুরোনো গাড়িগুলো ভাড়ায় দিয়ে ইভ্যালির দৈনন্দিন খরচ মেটানোর চিন্তা করছে কমিটি। সেইসঙ্গে পুরোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেসব ঋণ নিয়েছেন, তাদের দখলে থাকা কোম্পানির সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু

তিন মাস পার হলেও এখনো ইভ্যালির দায়-দেনা বা কোম্পানির বর্তমানে কত অর্থ বা সম্পদ কোথায় রয়েছে, তার পুরোপুরি চিত্র পায়নি পরিচালনা বোর্ড। এজন্য একটি বেসরকারি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সবার আগে নিরীক্ষার কাজটি শেষ করতে হবে। এখন সেই কাজটি চলছে। নিরীক্ষা শেষ হলে আমরা বুঝতে পারব ইভ্যালির আসলে কত টাকা আছে, আর তাদের দায়-দেনা কত, তাদের আর্থিক পরিস্থিতি কী। তখন এই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।

এই নিরীক্ষার কাজ শেষ করতে বেশ সময় লাগবে বলে তিনি ধারণা করেন। এর পাশাপাশি ইভ্যালির যেসব সম্পদ বা গোডাউনে পণ্য রয়েছে, সেগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। গোডাউনে যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলোর তালিকা করতেই একমাস পার হয়ে যাবে, বলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।

সাবেক বিচারপতি বলেন, গ্রাহক ও মার্চেন্ট যারা পাওনাদার রয়েছেন, তাদের পাওয়া যাতে যতটা সম্ভব শোধ করা যায়, সেজন্যই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

কারাগারে থাকা ইভ্যালির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন কোথায় কীভাবে অর্থ ব্যয় করেছেন, তার তালিকা দেওয়ার জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: