কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুদকে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে এবার বোনের অভিযোগ!

মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ দিয়েছেন তার সৎবোন রত্না বালা প্রজাপতি।

কোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগটি অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন শুক্রবার এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হত্যার অন্যতম আসামি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে তার সৎ বোন রত্নাবালা প্রজাপতি মঙ্গলবার দুদক সমন্বিত অঞ্চল, চট্টগ্রাম-১ এর কার্যালয়ে কোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে বলা হয়, প্রদীপ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর মোহাম্মদপুর এলাকায় রত্নাবালার ১২ শতক জমি ও একটি চার তলা ভবন দখল করে নেয়। এর মধ্যে ১২ শতক জমিটি প্রদীপ তার স্ত্রী চুমকি কারনের নামে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কিনেছেন বলে রেজিস্ট্রি বায়না করা হয়। কিন্তু বায়না অনুযায়ী একটাকাও পাননি রত্নাবালা।

অভিযোগের বিবরণে রত্নাবালা বলেন, আমার বাবা ছিলেন প্রেমলাল প্রজাপতি। মা যুগলরানী প্রজাপতি। আমরা দুই বোন।

বোনটি অল্প বয়সে মারা যায়। আমার বাবার মৃত্যুর পর হরেন্দ্র লাল দাশ নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন মা। ওই সংসারে প্রদীপসহ তিন সন্তান রয়েছে।

উত্তরাধীকার হিসেবে বাবার ১২ শতক জমি ও চার তলা ভবনটির একমাত্র মালিক আমি। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর প্রদীপ দাশ ওই জমি জোরপূর্বক দখল করে নেন। পরবর্তীতে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার স্ত্রী চুমকি কারনের নামে রেজিস্ট্রি বায়না করে নেন। এতে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় ওই জমি বায়না করেছে বলে উল্লেখ করা হলেও তার একটি টাকাও দেননি প্রদীপ। ওই জমিতে প্রদীপ ৯টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময়ে প্রদীপ পৈতৃক সূত্রে পাওয়া মুরাদপুর এলাকার চার তলা ভবনটিও দখল করে নেন। প্রদীপ তার কুকর্মের সহযোগী আলী আকবর নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ওই বাড়িটি বর্তমানে দখলে রেখেছেন। আলী আকবর ইয়াবা মামলায় ৯ মাস জেলও খেটেছেন।

রত্নাবালা বলেন, সম্পত্তি দখল করতে প্রদীপ আমার ছেলে বিবেক রঞ্জন চৌধুরীকে সাজানো নারী নির্যাতন মামলার আসামি করেছে। নিলুফা নামে টেকনাফের এক নারীকে দিয়ে এ মামলাটি করায়। মামলায় আমার ছেলেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। আমার মেয়ে বেবী চৌধুরীকেও নানা লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। তাদের হামলায় বেবী চৌধুরী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও ছিল।

এর আগে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অন্য একটি অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় তাকে আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হবে। আর মামলা দায়েরের পর প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারন গা-ঢাকা দিয়েছে।

এর আগে দুদক কার্যালয়ে চুমকি কারনের দেয়া সম্পদ বিবরণীতে বলা হয়, মুরাদপুরের মোহাম্মদপুরের ১২ শতক জমি তার মৎস্য খামার থেকে আসা লাভের টাকায় কিনেছে। কিন্তু অনুসন্ধানে মৎস্য খামার বা ব্যবসার কোন অস্তিত্ব পায়নি দুদক। চুমকি কারনের সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই শেষে দুদক কর্মকর্তারা ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ পান। প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করে ওই টাকা স্ত্রীর নামে দিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১শে জুলাই দিনগত রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় প্রদীপ কুমার দাশসহ ১০ পুলিশ সদস্য কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। ওই মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব। আমার সাংবাদ

পাঠকের মতামত: