কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রদীপে আটকে আছে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

ইকরাম চৌধুরী টিপু, কক্সবাজার::

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি তৃতীয় দফায় সময় নিয়েও রিপোর্ট জমা দিতে পারছে না। সিনহা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের জবানবন্দি রেকর্ড করতে না পারায় তদন্ত রিপোর্ট শেষ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। অনেকটা প্রদীপেই আটকে আছে এ রিপোর্ট।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৩ আগস্ট প্রথমে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এ কমিটি গঠন করেছিল। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির বাকি সদস্যরা হচ্ছেন চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ এবং কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহজাহান আলী।

কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে গত ৪ আগস্ট তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু করে। পরে গত ১৬ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় সাত কর্মদিবস এবং সর্বশেষ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তৃতীয় দফায় আরো সাত দিন তদন্ত কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মধ্যে ওসি প্রদীপের জবানবন্দি গ্রহণের চেষ্টা করে কমিটি। কিন্তু ওসি প্রদীপ র‍্যাবের রিমান্ডে থাকায় তাঁর জবানবন্দি নিতে পারেনি কমিটি।

কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তাঁরা। এ পর্যন্ত কমিটি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৬৭ জনের জবাববন্দি গ্রহণ করেছে। শুধু প্রদীপ কুমার দাশের জবানবন্দি নিতে পারেনি। তাঁর জবানবন্দি নিতে পারলেই রিপোর্ট শেষ করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারবে কমিটি।

মিজানুর রহমান জানান আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউজে কমিটির সভার পর রিপোর্ট জমা দিতে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা চলতি আগস্ট মাসের শেষের দিকে (২৯ ও ৩০ আগস্ট) যেকোনো একদিন প্রদীপ কুমার দাশের সাক্ষাৎ পেতে আদালতে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু র‍্যাব তৃতীয় দফার রিমান্ডে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর (প্রদীপের) সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে না। এখন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য রোববার (আজ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখবে কমিটি।’

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।

গত ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রদীপ কুমার দাশ,লিয়াকত আলী ও নন্দদুলাল রক্ষিতসহ সাত পুলিশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ মামলার অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মো. মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এ নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই। তবে আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

ওই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে, পুলিশের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত হয়েছেন।

পাঠকের মতামত: