কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বারবার কক্সবাজার সৈকতে মৃত তিমি, রহস্য অজানা!

সুজাউদ্দিন রুবেল::

গত কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসছে মৃত কাছিম, ডলফিন ও তিমি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর রহস্য। গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ও শনিবার (১০ এপ্রিল) কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে ভেসে এসেছে আরও দুটি বিশাল আকৃতির মৃত তিমি। যার মৃত্যুর রহস্যও এখনো অজানা। 
তবে গবেষকরা বলছেন, সাগরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে উপকূলে এসব মৃত সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসছে। সমুদ্র দূষণের মাত্রা বাড়ায় সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর কারণ কিনা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এসব প্রাণীর সুরক্ষার দাবি পরিবেশবাদীদের। আর বারবার কক্সবাজার উপকূলে মৃত প্রাণী ভেসে আসার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে বলে জানিয়েছে সামুদ্রিক গবেষণা ইনস্টিটিউট।
শুক্রবার হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসে বিশাল আকৃতির মৃত তিমি। এরপর শনিবার ভেসে আসে আরও একটি মৃত তিমি। যাদের গায়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন। ভাঙা ছিল হাঁড়ও। তিমি দুটি পচে দুর্গন্ধ ছড়ালেও মুছে যায়নি এসব আঘাতের চিহ্ন।
মৃত তিমির নমুনা সংগ্রহ করতে আসে নানা সংস্থা ও গবেষকরা। তারাও স্বীকার করেন, তিমির গায়ে আঘাত রয়েছে। আর মৃত্যুর কারণ হতে পারে জাহাজের সঙ্গে আঘাত কিংবা বর্জ্য খাওয়ার জন্য।
কক্সবাজারের মেরিন লাইফ অ্যালাইয়েন্সে নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, শনিবারের মৃত তিমিটির গায়ে বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে; যা হতে পারে জাহাজের আঘাতে। মেরুদণ্ডের একটি হাঁড়ও ভাঙা রয়েছে। এ ছাড়া ১০-১৫ দিন আগে সাগরে কী ঘটেছে এটাও খতিয়ে দেখা দরকার, ওখানে কিছু হয়েছিল কি না?
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো. আশরাফুল হক বলেন, তিমির পিঠে আঘাত রয়েছে। মাথার অংশের হাঁড় পচে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে বোঝা যায়, অনেক দিন আগে তিমিগুলো মারা গেছে। তীব্র পচনশীল হওয়ার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বেশি। প্রাথমিকভাবে আঘাতের কারণে মারা যেতে পারে বলে ধারণা করছি।
বারবার কক্সবাজার সৈকতে মৃত সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদীরা। তাদের দাবি, সমুদ্র দূষণের মাত্রা বাড়ায় সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর কারণ কিনা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এসব প্রাণীর সুরক্ষার উদ্যোগ নেয়া দরকার।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, গত কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার উপকূলে মৃত সামুদ্রিক কাছিম, ডলফিন ও তিমি ভেসে আসছে, যা নিয়ে আমরা চিন্তিত। তবে সমুদ্রে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
সেভ দ্যা ন্যাচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে অব্যাহতভাবে সামুদ্রিক প্রাণী মারা যেতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কেউ এসব প্রাণী রক্ষায় এগিয়ে আসছে না। তাই বাংলাদেশে সমুদ্র সম্পদ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সমুদ্র কমিশন গঠন করা উচিত বলেও জানান তিনি।
আর সামুদ্রিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মৃত সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছেন তারা।
বাংলাদেশ সামুদ্রিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রুপক লোধ বলেন, এর আগে সৈকতে প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য এসেছে। এখন দেখলাম পর পর দুদিনে দুটি বিশাল আকৃতির মৃত তিমি ভেসে এসেছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের ফিজিক্যাল স্টাডি করতে হবে। কারণ কেন বারবার কক্সবাজার সৈকতে এসব সামুদ্রিক প্রাণী মৃত অবস্থায় ভেসে আসছে। অন্য কোথাও আসেনি কেন। গত বছরেও এসেছে, এ বছরও এল। এই বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মৃত তিমি দুটি বালিয়াড়িতে গর্ত করে চাপা দেয়া হয়েছে। পরে কঙ্কালগুলো সংগ্রহ করে জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে।

পাঠকের মতামত: