কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মেজর সিনহা নিহতের ঘটনায় ৬৯ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ

ইকরাম চৌধুরী টিপু, কক্সবাজার::

কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির গণশুনানি শেষ হয়েছে। শুনানিতে নয়জন সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ৬০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার আশা করছে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিতে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের কার্যালয়ে গণশুনানি গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।

গণশুনানি শেষে বিকেল ৫টার পর তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করছি আগামী ১৩ আগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে পারব।’

এদিকে শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে আসা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চেকপোস্টে হঠাৎ করে দাঁড়াতে বললে স্যারের (অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের) গাড়ি রাস্তার পশ্চিম পাশে থামে। এ সময় লিয়াকত (বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক) স্যার একটি গুলি করে। গুলির পর সিনহা স্যার চিৎকার করে ওঠেন। এ সময় আরো দুটিসহ মোট তিনটি গুলি করে। পরে একজন তাঁকে লাথি মারে। এরপর গাড়ির ড্রাইভার আরো একটি গুলি করে। এরপর ২০ থেকে ২২ মিনিট পরে প্রদীপ (টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) স্যার আসেন।’

এর আগে গত ১২ আগস্ট সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় গণশুনানি করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ওই দিন তদন্ত কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে  এই তথ্য জানানো হয়েছিল।

সিনহা রাশেদ নিহতের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত হয় এই তদন্ত কমিটি। এ তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান। সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহা. শাজাহান আলী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ।

এই কমিটিকে প্রথমে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলা হয়। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় আরো সাত দিন বাড়ানো হয়।

কাজ শুরুর পর গত ৪ আগস্ট কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান কক্সবাজারে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তদন্ত কমিটির আনুষ্ঠানিক কাজ আজ থেকে শুরু হয়েছে। কমিটির প্রথম বৈঠকে তদন্তের কর্মপন্থা ঠিক করা হয়েছে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলা হবে। ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে যেটুকু করা দরকার, তদন্ত কমিটি তাই করবে। কমিটি সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করবে।’

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।

পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।

এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব। যাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে তারা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।

পাঠকের মতামত: