কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রায়হান হত্যা: আকবরকে পালাতে ‘সাহায্য করায়’ ওসি-এসআই বরখাস্ত

সিলেটে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন আহমদ হত্যা মামলার আসামি নগরীর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভুঁইয়াকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এঁরা হলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র ও রায়হান হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেন।

আজ বুধবার বিকেলে এই দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের।

অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, ‘আককবরকে পালাতে কারা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের খুঁজে বের করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ১৮ নভেম্বর এই দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’

এর আগে একই অভিযোগে বন্দর বাজার ফাঁড়ির এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে জানান বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের।

সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন আহমদকে গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। পরের দিন ১১ অক্টোবর সকালে তাঁর লাশ পায় পরিবার। পরে ওই দিন রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। স্বজনদের অভিযোগ, ১০ হাজার টাকা না পেয়ে রায়হানকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর ১২ অক্টোবর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এসআই টিটু চন্দ্র দাস, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও তৌহিদ মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যাহার করা হয় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে। পরে ২১ অক্টোবর মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে এসআই হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ঘটনার পর ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আকবর পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। এরপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি যাতে পালিয়ে ভারতে চলে যেতে না পারেন- এজন্য সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী সব থানা এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়। কিন্তু তার মধ্যেও আকবর পালিয়ে ভারতে চলে যান।

আকবরের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শ পাওয়ার পর সিলেটের ভোলাগঞ্জ সীমান্ত ও মেঘালয়ের মাঝেরগাঁও এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। প্রথমে শিলং হয়ে আসামের শিলচরে অবস্থান করেন। ৯ নভেম্বর দুপুরে কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে আসার পথে সীমান্ত এলাকায় লকডাউন থাকায় ভারতের খাসিয়ারা আটক করে। এরপর তারা তাঁকে বাংলাদেশের খাসিয়াদের কাছে হস্তান্তর করে।

গ্রেপ্তারের পর আকবরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রিমান্ড শেষে ১৭ নভেম্বর আকবরকে আদালতে হাজির করা হলেও তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

এ ছাড়া এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য এএসআই আশেক এলাহি, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস এবং হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। এঁদের কেউ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

পাঠকের মতামত: