কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রেলযাত্রার স্বপ্ন মেলছে ডানা

রেলে চড়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে যাওয়ার যে স্বপ্ন দেশের মানুষ গত এক দশক ধরে দেখছে- তা এখন সত্যি হওয়ার পথে। সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কক্সবাজার অংশে রেল ট্র্যাক বসানোর পাশাপাশি এখন সিগনেলিং তার টানা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার সদর এলাকায় ৩ কিলোমিটার রেললাইন এখন দৃশ্যমান। ১০২ রুট কিলোমিটার এবং ১২৯ ট্র্যাক কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইনের বাকি অংশেও কাজ চলছে পুরোদমে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। ২০২২ সালের মধ্যে এই মেগা প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ হওয়ার কথা।
চলছে সিগনেলিং তার টানার কাজ: প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজার সদরের পানিরছড়া এলাকায় বসানো রেল ট্র্যাকে গত সপ্তাহ থেকে সিগনেলিং তার টানার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার রেল ট্র্যাকে সিগনেলিং তার টানার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রেল ট্র্যাকে সিগনেলিং তার বসানোর কাজ চলছে। সিগনেলিং তার টানার কাজ দ্রুত চললেও রেল ট্র্যাক স্থাপনে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। রেল ট্র্যাক স্থাপনের কাজটি কঠিন উল্লেখ করে বর্ষার আগেই কক্সবাজার অংশে উল্লেখযোগ্য রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ শেষ করতে চান প্রকল্প কর্মকর্তারা। আর বর্ষার পর শুরু হবে চট্টগ্রাম অংশে রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ। বড় ব্রিজ নির্মাণ শেষ পর্যায়ে: প্রকল্পের অধীনে সাঙ্গু নদীর উপর ১টি, মাতামুহুরী নদীর উপর ২টি এবং বাঁকখালী নদীর উপর ১টি বড় রেল ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে সাঙ্গু নদীর রেল ব্রিজের সিভিল ওয়ার্ক শেষ করে ৮টি গার্ডারের মধ্যে ৬টি গার্ডার বসানো হয়েছে। বাকি ২টি গার্ডার বসানো হবে দ্রæত। বিদেশ থেকে এসব গার্ডার আনা হয়েছে। বাঁকখালী নদীর উপর রেল ব্রিজেরও সিভিল ওয়ার্ক শেষ। ওই ব্রিজেও এখন গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহে গার্ডার বসানোর কাজ শেষ হবে। মাতামুহুরী নদীর উপর ২টি রেল ব্রিজের সিভিল ওয়ার্ক শেষ। তবে এখনো এই দুই ব্রিজে গার্ডার বসানোর কাজ শুরু হয়নি। শিগগির শুরু হবে এই কাজ।
অন্য ব্রিজ-কালভার্টের চিত্র: প্রকল্পের অধীনে ৩৯টি মেজর ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৫টি ব্রিজে সিভিল ওয়ার্ক শেষ করে গার্ডার বসানো হয়েছে। ২০টি ব্রিজের সিভিল ওয়ার্ক শেষ। এখন গার্ডার বসানো হবে। বাকি ৪টিতে সিভিল ওয়ার্কের কাজ চলছে। এছাড়া দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে আন্ডার পাস, ওভার পাস, কালভার্ট ও মাইনর ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে ২২৩টি। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৭৬টির। বাকিগুলোর কাজ চলছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পূর্বকোণকে জানিয়েছেন।
মাটি ভরাট হয়েছে ৭৫ শতাংশ:
জায়গাভেদে ১৫ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত মাটি ভরাট করতে হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে। কোথাও ১৫, কোথাও ১২, কোথাও ১০, কোথাও ৫ ফুট পর্যন্ত মাটি ভরাট করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম অংশের সাতকানিয়ায় ছাড়া বাকি জায়াগাগুলোতে মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব মিলিয়ে ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।
কাজ চলছে ৭টি রেল স্টেশনে:
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে মোট ৯টি রেল স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ডুলাহাজরা রেল স্টেশনের কাজ শেষের দিকে। দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ঈদগাঁও এবং কক্সবাজারে রেল স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। তবে সাতকানিয়া এবং রামুতে রেল স্টেশন নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
বর্ষায় কাজে ভাটার শঙ্কা:
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, স্টেশন নির্মাণ, মাটি ভরাট, ছোট-বড় সেতু নির্মাণ, রেল ট্র্যাক স্থাপন কাজ সমানতালে চলছে। গত সপ্তাহ থেকে যেসব এলাকায় রেল ট্র্যাক স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে সিগনেলিং তার টানার কাজ চলছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে দেওয়া লকডাউনেও আমরা প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখিনি। সব বিভাগেই কাজ চলছে। তবে সামনে বর্ষা থাকায় কাজ নিয়ে কিছুটা চিন্তা হচ্ছে। কারণ বর্ষায় অনেক কাজ করা যায় না। তাই বর্ষা শুরুর আগে যতটা সম্ভব কাজ এগিয়ে নিতে চাই।
প্রকল্পের সার সংক্ষেপ:
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে অর্থ সংস্থান না হওয়ায় কাজ আটকে যায়। পরে এডিবির সঙ্গে চুক্তির পর বাংলাদেশ সরকার ও এডিবি মিলে এই প্রকল্পে জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থের জোগান দেয়। ২০১৮ সালে ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল ট্র্যাকের এই রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত রয়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ।

পাঠকের মতামত: