কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের বক্তব্যে মিয়ানমার নাখোশ

রোহিঙ্গাদের পক্ষে ১৬ ভিডিও আইসিসিতে

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা নিপীড়নের পূর্ণ অনুসন্ধান শুরু করার পক্ষে ১৬টি ভিডিওসহ বেশ কিছু অভিমত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) জমা হয়েছে। আইসিসির রেজিস্ট্রারের পক্ষে জুডিশিয়াল সার্ভিস ডিভিশনের পরিচালক মার্ক ডুবিসন এক আবেদনে বলেছেন, ‘গোপনীয়’ আকারে ওই ভিডিওগুলো আইসিসির রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ভিডিওগুলোর মাধ্যমে আইসিসিতে প্রতিনিধিত্ব করতে ইচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের (রোহিঙ্গাদের) পরিচয় জানাজানি হয়ে যেতে পারে। এ কারণে ভিডিওগুলো আদালতের বিধান অনুযায়ী ‘গোপনীয়’ আকারেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের হেগে আইসিসির প্রাক-বিচারিক আদালত-৩-এর কাছে গত বৃহস্পতিবার ওই আবেদন উপস্থাপন করা হয়।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে গণবাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার বিষয়টি পূর্ণ অনুসন্ধান শুরু করতে আইসিসির কৌঁসুলি ফাটু বেনসুডা গত আগস্টে আইসিসিতে আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আইসিসির প্রেসিডেন্ট প্রাক-বিচারিক আদালত-৩কে দায়িত্ব দেন। আইসিসির কৌঁসুলির আবেদনের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা বা তাদের প্রতিনিধির স্বেচ্ছায় অভিমত জানানোর শেষ সময় ছিল গত ২৮ অক্টোবর। এর আগে বেশ কিছু অভিমত আইসিসি প্রকাশ করলেও ১৬টি ভিডিওতে রোহিঙ্গাদের জবানবন্দি ‘গোপনীয়’ আকারেই রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, আইসিসির রেজিস্ট্রারের দপ্তর ওই ১৬টি ভিডিও গ্রহণ করার পর সেগুলো ‘ট্রিম কনটেইনারে’ ভরে আইসিসির প্রাক-বিচারিক আদালত-৩-এর কাছে পাঠিয়েছে। আইসিসির রেজিস্ট্রারের পক্ষে জুডিশিয়াল সার্ভিস ডিভিশনের পরিচালক মার্ক ডুবিসন এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা বা তাদের প্রতিনিধিদের ৮৫টি অভিমত ফরম প্রাক-বিচারিক আদালত-৩-এ উপস্থাপন করেন।

সেগুলোর পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ওই আদালত আইসিসির কৌঁসুলির আবেদনের বিষয়ে (পূর্ণ অনুসন্ধান শুরুর অনুমতি) সিদ্ধান্ত দেবেন।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বক্তব্যে মিয়ানমার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত সোমবার নেপিডোতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব সো হান ওই দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীর কাছে ওই অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মিয়ানমারকে মিথ্যাচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করেছে—এমন ডাহা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপকালে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মিয়ানমারের সচিব বলেন, বাংলাদেশের ওই বিজ্ঞপ্তি দুই দেশের মধ্যে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে না।

মাত্র তিন হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গাকে স্বীকার মিয়ানমারের : গত বছর অক্টোবর মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে ২২ হাজার ৪৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিল। গত ১ নভেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ২০ হাজার ৯৬৩ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করেছে। তাদের মধ্যে কত জন রোহিঙ্গার তথ্য মিয়ানমারের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে মিলেছে তা এখনো জানায়নি। তবে গত ১১ জুলাই পর্যন্ত সাত দফায় মিয়ানমার মাত্র তিন হাজার ৪৫০ জনকে মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে স্বীকার করে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং নাগরিকত্ব ছাড়া কোনো রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হয়নি। আর মিয়ানমারও তাদের দাবি পূরণের ব্যাপারে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ গত ১৫ অক্টোবর আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছে।

পাঠকের মতামত: