কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ান প্ল্যাটফর্মে কম্বোডিয়াকে চায় বাংলাদেশ

 

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে প্রথম যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম। আর কম্বোডিয়ার ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইয়াত সোফিয়া। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিবসহ দুই দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে একটি যৌথ কমিউনিটি, বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু, ফলাফল নিয়ে মিটিং মিউনিটস এবং দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) করার জন্য সমঝোতা স্বাক্ষর করা হয়েছে।

এগুলোতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম এবং কম্বোডিয়ার পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইয়াত সোফিয়া সই করেন। এছাড়া বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, আজ প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে প্রথম যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজার নামে একটি রাস্তা বাংলাদেশে নামকরণ করা হয়েছে। তারাও তাদের রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করবেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের যৌথ কমিশনের বৈঠকের প্রথম ভিত্তি রচনা হয়েছিল। সেখানে আমরা যৌথ কমিশনের নিয়মিত বৈঠকের বিষয়ে সম্মত হয়েছিলাম। সে সময়ে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। দেরিতে হলেও প্রথমবারের মতো বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো। পরবর্তী বৈঠক ২০২২ সালে কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, প্রতি দুই বছর পরপর যৌথ কমিশনে দুই দেশের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রথম বৈঠকে যৌথ কমিউনিকে স্বাক্ষর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু এবং ফলাফল নিয়েও একটি দলিল স্বাক্ষর হয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) করার জন্য আরেকটি সমোঝতা সাক্ষর করা হয়েছে। যৌথ কমিউনিকে মাধ্যমে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নিজেদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করবে। এ বছরেই দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠকের কথা রয়েছে। সেই সঙ্গে এ বছরে দুই দেশের বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী তিন বছর দুই দেশ একত্রে সাংস্কৃতিক বিনিময় করবে। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া কম্বোডিয়ার কাছে দেয়া হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী একত্রে পালন করার বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। কম্বোডিয়াতেও এ অনুষ্ঠান পালন করা হবে।

jagonews24

দুই দেশের পর্যটন বাড়ানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছর ৭ হাজার বাংলাদেশি কম্বোডিয়া গিয়েছে। বাংলাদেশিদের ই-ভিসা দেয়া হয়। ফলে এটি আরও সহজ করা এবং নিয়মিত যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের উড়োজাহাজ চলাচলের আলোচনা এ বছরেই হবে।

তিনি আরও বলেন, কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা আমাদের ১০ ভাগের এক ভাগ, মাত্র ১ কোটি ৬৫ লাখ। দেশের আয়তন আমাদের চেয়ে ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বড়। তাদের যে জমি রয়েছে, তাতে বাংলাদেশের কৃষক বা শিল্পের উদ্যোক্তারা কীভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী পর্যায়ে কথা হবে। আর কম্বোডিয়ায় পাট উত্পাদন করে আশিয়ান দেশগুলোতে রফতানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এম শাহরিয়ার আলম বলেন, মিয়ানমার আশিয়ান জোটের সদস্য। আর কম্বোডিয়াও আশিয়ানে সক্রিয় সদস্য। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ানকে ব্যবহার করে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়াবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বন্ধু হিসেবে এ দায়িত্বটি পালন করবে কম্বোডিয়া। বাংলাদেশ বৈঠকে জানিয়েছে যে মিয়ানমারের আত্মবিশ্বাসের অভাব। ফলে মিয়ানমারের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে আসিয়ান থেকে একটি সুশিল সমাজ বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিশ্বাস দিতে পারে, তাদের বোঝাতে পারে এবং সেই সঙ্গে যখন রোহিঙ্গারা ফেরত যাবে তখন সেখানে পরিবেশ যাতে সহায়ক ও শান্তিপূর্ণ হয়। এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ প্রস্তাব কম্বোডিয়া বিবেচনা করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। যেখানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি ও মত্স, বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত, সাংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তি, পর্যটন এবং সংসদীয় বন্ধুত্বের মতো বিষয়গুলো ছিল। দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের গুরুত্ব আরোপ করে। এছাড়া শিগগিরি ঢাকায় প্রশিক্ষণ সহযোগিতা নিয়ে কারিগরি ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকের বিষয়ে একমত হয়েছে। বৈঠকে দুই পক্ষই প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা চূড়ান্ত করার বিষয়ে স্বাগত জানায়। যার মাধ্যমে দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রোগ্রামে অংশ নিতে পরেবে। এছাড়া বাংলাদেশ-কম্বোডিয়া পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দুই দেশের সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন বিনিময় প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার বিষয়েও বৈঠকে একমত হয়েছেন।

পাঠকের মতামত: