কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আড়াই হাজার গরু-ছাগল বিতরণ

আব্দুর রহমান::

মহামারি করোনাকালে কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য আড়াই হাজার কোরবানি পশু বরাদ্দ এসেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংস্থা থেকে পাওয়া দুই হাজার গরু ও ৫শ’ ছাগল ২৪টি ক্যাম্পে বিরতণ করা হয়েছে। বাকি নয়টি ক্যাম্পে বরাদ্দ আসলে দেওয়া হবে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা অপ্রতুল।

সোমবার বিকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দোজা বলেন, ‘করোনার প্রভাবে অন্য বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর সংগ্রহ কম। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া পশু শরণার্থী শিবিরে দেওয়া হয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে, যেন সব রোহিঙ্গাই মাংস পায়। সে হিসেবে আরও কিছু কোরবানি পশু পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো পেলে বাকি ক্যাম্পে বিতরণ করা হবে।’

এদিকে আগামী বুধবার ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে, রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাই মুসলিম হওয়ায় তারা ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার কিছু শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গারা নিজেদের টাকায় ভাগাভাগি করে গরু কিনেছেন বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

টেকনাফ শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবু তাহের জানান, ‘এনজিও সংস্থার কাছ থেকে কিছু কোরবানির পশু এখানে বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের দিন লোকজনের মাঝে সেগুলোর মাংস বিতরণ করা হবে।’

তবে চার বছর ধরে টেকনাফের নতুন লেদা শরণার্থী শিবিরের আশ্রয় নিয়েছেন মোস্তফা কামাল। এই রোহিঙ্গা নেতা জানান, এবারও তার ক্যাম্পে কোরবানির পশু বরাদ্দ আসেনি। বাংলাদেশে আসার পরে এই ক্যাম্পের মানুষ কোরবানি পশুর মাংস পায়নি। এখানে ৩৬শ’ পরিবারের ১৯ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছে।

টেকনাফ লেদা ক্যাম্প ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, তার ক্যাম্পে ২৬’শ পরিবারের ১১ হাজার মানুষের বসতি। এসব মানুষ গত বছর কোরবানির ঈদে গরু মাংস পায়নি। এবার তার ক্যাম্পের লোকজনের ঈদে কোনও বরাদ্দ পায়নি।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সহকারী টেকনাফের নয়াপাড়া ও শালবন রোহিঙ্গা (২৬-২৭) ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. খালেদ হোসেন জানান, তার দুটি শিবিরের মধ্যে শালবন ক্যাম্পের জন্য এনজিও সংস্থা বাসমাহ ফাউন্ডেশনের কাছ ৭৩টি কোরবানির গরু পাওয়া গেছে। সেগুলো বিতরণ চলছে। এই ক্যাম্পে ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে।

এদিকে ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক দফা মিলে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের নতুন ঠিকানায় যায়। তার মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৪০৯ জন। নারী ৫ হাজার ৩১৯ জন। শিশু ৮ হাজার ৭৯০। ভাসানচরে এ পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে ২৪৪ রোহিঙ্গা শিশু।

পাঠকের মতামত: