কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারকাজে আইনজীবীদের পুল করবে কমনওয়েলথ

কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল প্যাট্রিশিয়া স্কটল্যান্ড বলেছেন, তাঁর সংস্থা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার আইনি লড়াইয়ে গাম্বিয়াকে সহায়তা দেওয়ার উপায় খুঁজছে এবং কমনওয়েলথ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। কারণ, তারা বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে।

লন্ডনে নিজ কার্যালয় থেকে এক একান্ত ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, কমনওয়েলথ সচিবালয় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আইনি লড়াইয়ে গাম্বিয়াকে সহায়তার জন্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো থেকে আইনজীবীদের একটি বড় টিম গঠনের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করে দেখছে।

প্যাট্রিশিয়া স্কটল্যান্ড বলেন, কমনওয়েলথের সদস্য কানাডা আইসিজেতে আইনি লড়াইয়ে গাম্বিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে তাঁর অফিস কমনওয়েলথে বিদ্যমান আইনবিদদের দিয়ে এই পদক্ষেপে সহায়তার পরিকল্পনা করেছে। তিনি বলেন, “(একইসঙ্গে) কমনওয়েলথ পরিবার এই ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘পূর্ণ সংহতি’ নিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে যাবে।”

কমনওয়েলথের শীর্ষ নির্বাহী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

গত সপ্তাহে লন্ডনে কমনওয়েলথ সচিবালয় এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে একটি উচ্চ পর্যায়ের সংলাপের পরে স্কটল্যান্ডের এ মন্তব্য এসেছে।

মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এক নির্মম সামরিক অভিযান শুরু করার পর দেশটির রাখাইন রাজ্যের ১.১ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়, যাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়।

গাম্বিয়া গত বছরের নভেম্বর মাসে ওআইসি, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করে। গত বছরের ১০-১২ ডিসেম্বর আইসিজে তার প্রথম শুনানি করে।

গত ২৩ জানুয়ারি আইসিজে ঐতিহাসিক সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং রুল দেয় যে এই মামলা চালানোর যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে এবং মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সুরাহা করে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কমনওয়েলথের পরিকল্পনা ছাড়াও প্যাট্রিশিয়া স্কটল্যান্ড কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বহু উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার বিপর্যস্ত হলেও বাংলাদেশের ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সাফল্যের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

বর্তমানে কমনওয়েলথের ষষ্ঠ সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনরত প্যাট্রিশিয়া স্কটল্যান্ড জানান, তাঁর অফিস সবার জন্য সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সমান সুবিধা লাভের জন্য প্রচার চালাচ্ছে এবং মহামারির পটভূমিতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার পর্যালোচনা করছে।

কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও সাম্প্রতিক ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, কমনওয়েলথের মহামারি পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

প্যাট্রিশিয়া স্কটল্যান্ড বলেন, ‘আমরা পাঁচটি ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও জোরদার করার দিকে মনোনিবেশ করছি : ডিজিটাল, ভৌত (অবকাঠামো), নিয়ন্ত্রণমূলক, সরবরাহ এবং বাণিজ্য-বাণিজ্য সংযোগ।

জাতীয়তায় ডোমিনিকান প্যাট্রিশিয়া স্কটল্যান্ড হচ্ছেন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে আসা কমনওয়েলথের দ্বিতীয় মহাসচিব এবং প্রথম নারী। এনটিভি

পাঠকের মতামত: