কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর আস্থা রাখছে বাংলাদেশ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা (ফাইল ছবি)
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা (ফাইল ছবি)

বৈশ্বিক কর্তৃত্ব নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত অবস্থান নেয় এবং রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা হয়েছে কিনা সেটি তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। অন্যদিকে চীন মিয়ানমারের ক্ষমতার পালাবদলে স্বভাবসুলভ মৃদু প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মনে করেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মিয়ানমারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আসার একটি সুযোগ এবং এই প্রক্রিয়ায় চীনের ওপর আস্থা রাখছে বাংলাদেশ।

বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চীনকে এখনও আস্থায় রেখেছি। সব দেশ আমাদের বন্ধু দেশ। চীন এ বিষয়ে কিছু অগ্রসর হয়ে এসেছে। জাপান কিছুটা অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু সেটি এখনও বেশিদূর এগোয়নি। চীন কিছুটা অগ্রগতি লাভ করেছে। আমরা তাদের আস্থার মধ্যে রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমদের সরকারের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের চুক্তি হয়েছে। সুতরাং প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকা উচিত। আমাদের ইতিহাস আছে, আগে যখন মিয়ানমারে সামরিক সরকার ছিল, ১৯৭৮ বা ১৯৯২ সাল, ওই সময়ে প্রত্যাবাসন হয়েছে। তাহলে এখন কেন হবে না? মিয়ানমারের জন্য এটি সুযোগ। যদি প্রত্যাবাসন করে তাহলে তাদের জন্য সুযোগ যে তারা অন্যদের সঙ্গে আছে। তাদের এই সুযোগ নেওয়া উচিত।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণে আপত্তি আছে চীনের এবং সে কারণে ওই সংস্থা কোনও বিবৃতি বা পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীন যা বলছে সেটি তাদের নীতি। তাদের নীতিতে আমি নাক গলাতে পারি না।’

পশ্চিমা বিশ্ব রোহিঙ্গা ইস্যুতে লিপ সার্ভিস দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সবাইকে বলেছি। আমরা মিয়ানমারকে বলেছি। পৃথিবীর সব দেশকে বলেছি, জাতিসংঘকে বলেছি। সবাই আমাদের লিপ সার্ভিস দিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা এগুলো নিয়ে বেশি বেশি বলেন, এর জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাদেরও ব্যবসা মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েকগুণ বেড়েছে। তারাই বলেছেন গণহত্যা হয়েছে, তারাই বলেছেন জাতিগত নিধন হয়েছে, কিন্তু তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমতো করে যাচ্ছেন। যারা আজ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বলছেন তাদের আবার অর্থনৈতিক বিষয়গুলো চলমান আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের পথ ধরিনি। তবে আমরা বিশ্বাস করি যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকা উচিত এবং সেটি আমরা বলেছি। ওনারা বলেন একদিকে, কাজ করেন অন্যদিকে। কিন্তু আমরা এরকম না। আমি যা বলি সেটাই করি।

বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’র মুক্তি দাবি করলেও বাংলাদেশ তার মুক্তি দাবি করেনি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তিনি জানান, দেশটির নতুন সরকারকে বাংলাদেশ উপদেশ দিয়েছে গণতান্ত্রিক রীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা সু চির মুক্তি দাবি করিনি। আমাদের এখানে রোহিঙ্গা যারা আছে তারা কেউ মুক্তি দাবি করেনি। বরং তারা বলছে সু চিকে কুতুপালং ক্যাম্পে পাঠানো হোক। এসে দেখে যান তিনি কী কাজ করেছেন।’

২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা যখন নির্যাতিত হয়, তখন একটি নির্বাচিত সরকার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যিনি ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। আমরা কেউ এ ঘটনা ঘটবে সেটি আশা করিনি।’

এখন উনার নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাফাই গেয়ে তো লাভ নেই।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্প

রোহিঙ্গারা আবার দলে দলে আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকের উৎকণ্ঠা যে এখন অনেক রোহিঙ্গা আসতে পারে। আমরা আমাদের সীমান্ত ব্যবস্থা জোরদার করেছি।’

২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা যখন এসেছিল তাদের বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন তারা গ্রহণ করার মনমানসিকতায় নেই বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে অন্যরা নিয়ে যাক। আমরা নিতে রাজি নই। আমাদের কোনও আশঙ্কা নেই। তবে আমাদের কিছু বন্ধুরাষ্ট্র বলেছে এ ধরনের আশঙ্কা আছে।’

মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ঘটনায় অনেক দেশ নিন্দা জানালেও বাংলাদেশ কেন জানায়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। অন্যরা নিন্দা জানিয়ে শেষ। রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হলো এবং তারা নিন্দা জানিয়ে শেষ। তারা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়লো। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। মিয়ানমারের ইতিহাসে মিলিটারি বহু বছর ধরে আছে। আমরা বলেছি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং এটি চর্চাও করি। আমরা গণতন্ত্র অন্য দেশে বিকশিত হোক এটিতে উৎসাহ দেই এবং বলেছি মিয়ানমার যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখে। এটি আমরা দৃঢ়ভাবে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বলেছি তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্র, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। আমরা চাই সেখানে যেন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে চলমান থাকে সেটির কথা বলেছি।’

মধ্যপ্রাচ্যের মতো একটি অজুহাত নিয়ে এখানে একটি বিরাট রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক এটি বাংলাদেশ চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের কথা বলেছি, রোহিঙ্গাদের কথা বলেছি, আমরা শান্তির কথা বলেছি। আমরা চাই না এই অঞ্চলে মারামারি হোক।’

বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে বৈঠক অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কারণ, তারা লাইন বন্ধ করে দিয়েছে।’

পাঠকের মতামত: