কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখনো অনিশ্চিত

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গতকাল শনিবার নীরবেই পালিত হলো বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বর্তমানে সাত কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এটিই সবচেয়ে বেশি। বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫৯ লাখ। তাদের অর্ধেকের বয়স ১৮ বছরের কম। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে শরণার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশের উৎস পাঁচটি দেশ সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও মিয়ানমার। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) কর্তৃক এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সে দেশে প্রত্যাবাসন এখনো অনিশ্চিত। মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখছে না। প্রায় তিন বছর আগে জাতিগত নিধনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে। কয়েক দশক ধরে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালালেও ইতিহাসে এ প্রথম আইসিসিআরআইসিজের মতো আদালতে দাঁড়াতে হয়েছে মিয়ানমারকে। কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, কেউ শখ করে উদ্বাস্তু হয় না। সংঘাতের কারণে লোকজন উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। তাই সংঘাতের উৎস বন্ধ করতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ কমাতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে, হিংসা-বিদ্বেষ কমানো গেলে শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

প্রতিবেশী মিয়ানমার আমাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে রাজি হয়েছে। তাদের বলেছি, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে হবে। স্বেচ্ছায় তাদের ফিরিয়ে নিতে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মিয়ানমার সব কিছুতে রাজি হয়েছে। কিন্তু গত তিন বছরে রাখাইনে কোনো সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেনি; বরং করোনার সময় বিশ্বের অন্য সব দেশে অস্ত্র বিরতি চললেও রাখাইনে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য আমরা দিন দিন আরও হতাশাগ্রস্ত হচ্ছি।

অন্যদিকে বিশ^ শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ কোটি নারী, শিশু এবং পুরুষ জোড়পূর্বক নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে শরণার্থী বা বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে। আরও বেদনাদায়ক এই যে, শুধু গত বছরেই এ ধরনের এক কোটি মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। বিশ্ব শরণার্থী দিবসে এ সংঘাত এবং নিপীড়নের অবসান ঘটাতে আমাদের ক্ষমতায় থাকা সব কিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। তিনি বলেন, আমরা সেসব দেশ এবং গোষ্ঠীর অবদানকেও স্বীকার করি যারা নিজেদের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উদারতা ও মানবতা দেখিয়েছে। তারা আমাদের ধন্যবাদ, সমর্থন এবং বিনিয়োগপ্রাপ্তির যোগ্যতা রাখে। আমাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক শরণার্থী সুরক্ষা ব্যবস্থাটির অখ-তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এবং বৈশ্বিক শরণার্থী ফোরামের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে শরণার্থী এবং আশ্রয়দাতা গোষ্ঠীগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।

কোভিড-১৯ মহামারীটি এ বছর শরণার্থী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য একটি অতিরিক্ত হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে, যারা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শরণার্থীরা এবং বাস্তুচ্যুত মানুষেরা করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবেও লক্ষণীয় সাড়া প্রদান করেছে। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে শুরু করে ইউরোপের হাসপাতালগুলোতে শরণার্থীরা নিজেদের সুরক্ষিত রেখে সেবিকা, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, শিক্ষক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দায়িত্বপালন করছে এবং তাদের আশ্রয়দাতাদের প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আমরা শরণার্থীদের তাদের দৃঢ়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই, যা দিয়ে তারা নিজেদের এবং আশপাশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত: