কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গা শিশুদের অন্য এক সকাল

নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে শিশুরা। নতুন পাকা ঘরে থাকার আনন্দ, সঙ্গে খাবার, ফলমূল। গতকাল ভাসানচর থেকে তোলা।

নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ছিল বিস্ময়। আগের দিন ঘর বুঝে পেতে পেতে সন্ধ্যা নেমেছিল, তার চারপাশ ঘুরে দেখা হয়নি তাদের। গতকাল সকাল থেকেই তাই তাদের আশপাশের ঘরগুলোর শিশুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পালা।

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে অস্থায়ী খুপরি ঘরে মাটিতে বিছানা পেতে থাকত তারা। ভাসানচরে খাট পেয়েই তাদের অনেকে সেগুলোর ওপর উঠে খুশিতে নেচেছিল। গতকাল রোহিঙ্গাদের কয়েকটি ঘরে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা খাটের ওপর শিশুদের আড্ডা।

কেউ কেউ আবার দোতলা খাটকে বানিয়েছে কাল্পনিক বাস। সিঁড়ি বেয়ে খাটে উঠছে-নামছে। কী খেলছে—জানতে চাইলে তারা জানায়, খেলার নাম ‘বাস’। যাত্রী তুলছে, নামাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের গুচ্ছগ্রামগুলোর মধ্যের রাস্তায় দু্ই শিশুকে দেখা যায় ক্রিকেট খেলতে। টেনিস বল আর কাঠের তক্তা। এগুলো নিয়েই খেলতে নেমেছে তারা। ঘরগুলোর সামনের বারান্দায় দড়ি বেঁধে লাফিয়ে পার হওয়ার খেলা খেলছিল তারা।

আরেকটি ভবনের রান্নাঘর এখনো চালু হয়নি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিকের খালি বোতল জমা করে দূর থেকে আরেকটি বোতল দিয়ে তা লক্ষ্য করে ছুড়ছে রোহিঙ্গা শিশুরা।

কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায়, ভাসানচরে খুবই খুশি তারা। ঘরের পাশেই খোলা জায়গা।

ইয়াসিন নামের এক রোহিঙ্গা জানান, কক্সবাজারে তাদের শিশুসন্তান, বিশেষ করে, কম বয়সী মেয়েদের নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো। পাচার হওয়া ছাড়া নিপীড়নের ভয়ও ছিল। সে তুলনায় ভাসানচর অনেক নিরাপদ ও সুরক্ষিত।

পাকা দালান, মেঝে থাকতেও অনেক রোহিঙ্গা শিশুকে ঘরের সামনে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়। আবার অনেকে যোগ দিয়েছিল রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলে মুরগির বিয়ের এক আয়োজনে।

রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের পাশেই দোকান চালু হয়েছে। বিস্কুট, আচার কেনার জন্য দোকানে কিছু সময় পর পর আসছিল রোহিঙ্গা শিশুরা।

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের আদলে শিগগিরই ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এনজিও প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের ক্লাস করতে হতো মেঝেতে বসে। ভাসানচরে পাকা দালানে বসে আধুনিক পরিবেশে পড়ালেখার সুযোগ পাবে রোহিঙ্গা শিশুরা। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য অনুমোদিত পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হবে। এতে ইংরেজি, গণিত, রোহিঙ্গা ভাষা শেখানো হবে।

পাঠকের মতামত: